সাত বছরে তৃতীয় বর্ষ ছাড়াতে পারলেন না সাদ্দাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর সাত বছরে তৃতীয় বর্ষ উত্তীর্ণ হতে পারেননি ডাকসুর এজিএস ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2019, 04:41 PM
Updated : 31 May 2019, 07:11 PM

আইন বিভাগের ছাত্র সাদ্দাম এটাকে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হিসেবে দেখলেও গত সোমবার তার তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ফেইসবুকে।

সাত বছরেও সাদ্দামের তৃতীয় বর্ষ শেষ করতে না পারার কথা তুলে ধরে ফেইসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে। সেখানে কেউ কেউ এই ছাত্রনেতার কঠোর সমালোচনা করলেও কেউ কেউ আবার তার পক্ষে কথা বলছেন।

সাদ্দামের ছাত্রত্ব টিকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে তিনি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যেই ছাত্র আছেন বলে জানিয়েছেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মই হচ্ছে আট বছরে স্নাতক সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে ছয় বছর হচ্ছে বিভাগীয় এবং দুই বছর হচ্ছে ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তের উপর। এক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধানেই চলছে।”

সাদ্দাম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন ২০১১-১২ সেশনে। প্রথম বর্ষ উত্তীর্ণ হতেই তিন বছর সময় নেন তিনি। অথ্যাৎ ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ সালের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় তাকে ফেইল থাকতে হয়। চর্তুথবার ২০১৫ সালে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে সাদ্দাম হোসেন দ্বিতীয় বর্ষে ওঠেন।

২০১৬ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফলেও উত্তীর্ণদের তালিকায় ছিল না তার নাম।  ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হলেও সবশেষ ২০১৮ সালে আবার ফেইল করলেন তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায়।  অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জীবনে মোট সাতবারে পাঁচবার অকৃতকার্য এই ছাত্র নেতা।

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি ও জিএসের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন এজিএস সাদ্দাম হোসেন, ছবিতে সামনের সারিতে সবার বাঁয়ে

এখন সাদ্দাম ফল পুনর্বিবেচনা বা মানোন্নয়নের জন্য আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক রহমত উল্লাহ।

 “এখন সে আবেদন দেবে নিয়ম অনুযায়ী, যদি সে চায় বা দেয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় সেটা বিবেচনা করবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে না, আমরা পারব না, তখন বিশ্ববিদ্যালয় বলে দেবে যে, স্যরি, ইউ ক্যান্ট।”

সাদ্দামের বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাইমা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন কারণেই অনেক শিক্ষার্থী এমন সমস্যায় পড়ে। তারা আমাদের কাছে আসলে আমরা মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে ডিনস কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠিয়ে দেই। এই কমিটিই কোনো শিক্ষার্থীকে সময় বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি দেখে থাকে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই ডিনস কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সাদ্দামের বিষয়ে কী হতে পারে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান তাকে ‘ব্রিলিয়ান্ট’ অভিহিত করে বলেন, “ডিনস কমিটির সভা প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। তার আবেদন আসলে সংশ্লিষ্ট অফিস বলতে পারবে বিষয়টি। তবে আমাদের নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

লেখাপড়ার এই অবস্থার কারণ জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জীবনে বিভিন্ন কারণেই বিভিন্ন বিপর্যয় ঘটে থাকে। নিম্ন উপস্থিতির কারণে আমার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়নি তিনবার। সেটি একটি বড় কারণ ছিল। এখন মানোন্নয়নের মধ্য দিয়ে এটির একটি সাধারণ সমাধান হবে।”

বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে তার সমালোচনাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন বলে দাবি করলেন সাদ্দাম।

“কারণ অবশ্যই এই বিষয়টি একটি সীমাবদ্ধতা এবং আমি চেষ্টা করব এটি কাটিয়ে উঠতে,” বলেন তিনি।