‘জঙ্গি তহবিল পাওয়ার আশায়’ পুলিশের গাড়িতে হামলা: সিআইডি

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ‘অর্থের যোগানদাতাদের’ দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ঢাকার মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2019, 01:57 PM
Updated : 30 May 2019, 02:19 PM

তিনি বলেছেন, “কোনো কাজ করতে না পারলে ফান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে তারা হামলা চালিয়ে অর্থ যোগানদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যাতে ফান্ড সচল থাকে।”

প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বৃহস্পতিবার সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জঙ্গি আদর্শে যারা উদ্বুদ্ধ হতে চায়, তাদের ফান্ড দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে বর্তমানে রমজান মাস। জাকাতের ফান্ড আছে। সেই ফান্ড থেকে অর্থ পেতেই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাদের (জঙ্গি) এই হামলা।”

কারা ওই টাকার যোগান দেয়, কীভাবে তা জঙ্গিরা পায়- এসব বিষয়ে কোনো তথ্য সিআইডি প্রধান দেননি।

তবে ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষপটের কারণে’ কিছু ‘ফান্ড’ দেশের বাইরে থেকেও আসে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“অর্থ যোগানদাতাদের মধ্যে যারা মূলত দেশের বাইরে থাকে, তারা কিছু কাজ দেখতে চায়। কিছু কাজ না দেখলে তো জঙ্গিদের ফান্ড করবে না। ‘তোমরা (জঙ্গি) কিছু কাজ কর, তা হলে ফান্ড দেব’- দাতারা যখন এ ধরনের কথা বলে, তারপরই এদেশের জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে কাজের প্রমাণ দেখাতে চায়।”

গত ২৬ মে রাতে মালিবাগে এসবি অফিসের সামনে এসবির একটি পিকআপে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই এসবি অফিসের পাশেই সিআইডি অফিস।

হঠাৎ ওই বিস্ফোরণে ট্রাফিক পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার (২৮) এবং রাস্তায় থাকা রিকশাচালক লাল মিয়া (৫০) আহত হন।

ওই ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল গুলিস্তানেও পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া হয়। দুই ট্রাফিক পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য ওই ঘটনায় আহত হন।

দুই ঘটনাতেই জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আইএসের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, এদেশের কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে মালিবাগের হামলার প্রসঙ্গ তুলে এক সাংবাদিক তদন্তের অগ্রগতি জানতে চান।

জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল বলেন, “তারা অ্যাকশন শো করতে এই হামলা চালাচ্ছে। এটা না করলে তাদের যে ফান্ড আসে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আরো বড় ফান্ড আনার জন্য অর্থ যোগানদাতাদের নজরে থাকার চেষ্টা করছে।”

পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়াও জঙ্গিদের উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেন সিআইডির প্রধান।   

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, “এসবির গাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত দেখে মনে হয়েছে এটা জঙ্গিদের কাজ।”

তিনি বলেন, “যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে তা অস্পষ্ট। তবে সিআইডির ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছুটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি টিম করে দেওয়া হয়েছে যারা আশপাশের ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহে কাজ করছে।”

মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শিবলী নোমান জানান, মালিবাগ ও গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা মামলা তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম।

দুই মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।