জনপ্রতিনিধি হলে মানুষের হৃদয় জয় করতে হয়: প্রধানমন্ত্রী

মানুষের হৃদয়ে যাতে স্থান করে নেওয়া যায় সেভাবেই জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2019, 10:26 AM
Updated : 27 May 2019, 10:26 AM

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত প্রথম মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা যে সমস্ত কর্মসূচি নিয়েছি সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় আপনারা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। কারণ আপনারা জনগণের প্রতিনিধি।

“একবার ভোটে জিতে যাচ্ছেন, এবারই শেষ না। জনগণের হৃদয় জয় করতে হবে, যেন জনগণ ভবিষ্যতেও আপনাদের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রাখে। সেদিকে আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন সেটাই আমরা চাই।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপথ নেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ময়মনসিংহের প্রথম মেয়র ইকরামুল হক টিটু। আর ১১ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারীসহ ৪৪ কাউন্সিলরকে শপথ পড়ান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এমএস গোলাম ফারুকের পরিচালনায় শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রমুখ।

নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, “আপনাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব। এটা মনে রাখতে হবে যে জনপ্রতিনিধি হওয়া মানে জনগণের জন্য… শুধু যারা আপনাকে ভোট দিয়ে শুধু তারা না, আপনি যখন জনপ্রতিনিধি তখন আপনি এলাকার সব মানুষেরই প্রতিনিধি।”

নিজের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। আমি আওয়ামী লীগ করি। কিন্তু আমি যখন প্রধানমন্ত্রী তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দলমত নির্বিশেষে সকলের কল্যাণ করাই আমার দায়িত্ব। আপনারাও নিজেকে সেভাবে মনে করবেন।”

এবার পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাজেটে বিপুল পরিমাণ যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সেটা জনগণেরই অর্থ। সেটা যেন জনগণের কাছে পৌঁছায়।”

পাশাপাশি নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নানা উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নের কাজটা যেন যথাযথভাবে হয় এবং সে কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ যেন খুশি হয় সেদিকেই আপনাদের কিন্তু দৃষ্টি দিতে হবে।

“আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে। প্রতিটি মানুষ উন্নতমানের চিকিৎসা পাবে।”

সারাদেশের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো এবং কর্মসংস্থান ও পরিকল্পিতভাবে শিল্প উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে কৃষিজমি রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যত্রতত্র যেখানে সেখানে যেন শিল্প গড়ে না ওঠে, আমাদের ফসলের জমি যেন নষ্ট না হয়। কারণ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ফসলের জমি রক্ষা করতে হবে।”  

পাশাপাশি শিল্পায়ন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিজস্ব বাজার সৃষ্টির ওপরও জোর দেন তিনি।

“প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে আমাদের একটা স্বদ্ভাব রয়েছে এবং সেখানে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের বাজার সম্প্রসারিত হতে পারে, আঞ্চলিকভাবে যেন আমরা আরও সমৃদ্ধশালী হতে পারি।”

একইসাথে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধের সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

গত বছরের অক্টোবরে দেশের ১২তম সিটি করপোরেশন হিসেবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গঠিত হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন ৫ মে ভোটের দিন রেখে নতুন এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রার্থী হন ইকরামুল হক টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির জাহাঙ্গীর আহমেদ। কিন্তু তিনি সরে দাঁড়ালে ইকরামুলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এরপর গত ৫ মে ৩৩টি সাধারণ এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ভোট হয়। এসব কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন ২৭২ জন।