রেলের ঈদটিকেট: অনলাইনে ভোগান্তির শেষ নেই

যাত্রীসেবা বাড়ানো ও ভোগান্তি কমাতে এবার ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ ই-টিকেটিংয়ের জন্য রাখলেও রেলের ওয়েবসাইট ও নতুন তৈরি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট কাটার চেষ্টা করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2019, 10:13 AM
Updated : 26 May 2019, 12:19 PM

ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির চতুর্থ দিন রোববারও অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কিনতে না পারার অভিযোগ করছেন অনেকে। বাধ্য হয়ে তাদেরকে ছুটতে হয়েছে কমলাপুর স্টেশনসহ বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টারে।ফলে দ্বিগুণ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন টিকেট প্রত্যাশীরা।

রোববার সকালে কমলাপুর স্টেশনে কথা হয় সরকারি তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। রাজশাহী যাওয়ার সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট মোবাইল অ্যাপে কিনতে ব্যর্থ হয়ে কমলাপুর এসেছেন। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা করেও মোবাইল অ্যাপে ঢুকতেই পারেননি তিনি।

“সকাল থেকে অনলাইনে এবং অ্যাপে চেষ্টা করেছি। রেলওয়ের ওয়েবসাইটে তাও ঢোকা যায় কিন্তু অ্যাপে ঢুকতেই পারি না। অ্যাপ ডাউনলোড করেও আবার ডিলিট করে দিয়েছি। পরে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি।”

একই অভিযোগ করলেন মুগদার বাসিন্দা সোহেল মাহবুব। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সোহেল মাহবুব বলেন, অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথম দুই দিন তিনি মোবাইলের অ্যাপে টিকেট কেনার চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন।

“আমার বাসায় তো ব্রডব্যান্ড নাই। পাড়ার একটা কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে অনলাইনে টিকেট কেনার চেষ্টা করেছি। একইভাবে মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করেও টিকেট কেনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারি নাই, এখন এখান থেকে টিকেট পাই কি না দেখি।”

রেলওয়ের অনলাইন টিকেট সেবা দিচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএন‌এসবিডি। রোববার দেওয়া হচ্ছে ৪ জুনের টিকেট। ঢাকার স্টেশন থেকে অনলাইনে বরাদ্দ আছে ১০ হাজার  ৫৬১টি টিকেট। এর মধ্যে দুপুর একটার ২০ মিনিট পর্যন্ত ছয় হাজার ৫৭৩টি টিকেট বিক্রি হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে সিএন‌এসবিডি।

তবে কমলাপুর স্টেশনের মনিটরে প্রদর্শিত সিএনএসবিডির এ তথ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন ]রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কিনতে আসা নাবিল আহমেদ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা দেখাচ্ছে কয়েক হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এই টিকেট পেল কারা? আমি এখানে আসার পরও সকাল থেকে ৩৫-৪০ বার অ্যাপে টিকেট কেনার চেষ্টা করেছি, পারিনি। এখানে আমার আশপাশে যারা আছেন সবাই চেষ্টা করেছে অ্যাপসে টিকেট কেনার। আমার জানামতে কেউ পায়নি। অ্যাপে যদি এত টিকেট বিক্রি হতো তাহলে আমরা সবাই এখানে কেন?”

এ বিষয়ে সিএন‌এসবিডির সিস্টেম এনালিস্ট ফারহান ইশতিয়াক টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া আর কারো বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি নেই। তিনি এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

 

ঈদের পর ই-টিকেটিংয়ের অব্যস্থাপনার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, “তারা (সিএনএসবিডি) আমাদের বলছে একসাথে প্রায় চার লাখ লোক অনলাইনে টিকেট কিনতে চায়। একারণে সবাইকে টিকেট দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঈদের পর আমরা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখব। তাদের যুক্তি সঠিক প্রমাণ না হলে আমরা অন্য চিন্তা করব।”

কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে টিকেট

অনলাইনে টিকেট না পেলেও কাউন্টার থেকে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারে টিকেট বিক্রির নির্ধারিত সময় ৪টার পরও টিকেট নিতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে টিকেট বিক্রির শেষ দিন রোববারও।

রেল কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবার টিকেটের জন্য কারও ‘ডিও’ না নেওয়ায় কোনো টিকেট ‘ব্লক’ করে রাখার প্রয়োজন পড়ছে না। এ কারণে কাউন্টার থেকে টিকেট পাচ্ছেন টিকেট প্রত্যাশীরা। যাত্রীরা মনে করছেন, টিকেট বিক্রির প্রথম দিন দুদকের কর্মকর্তারা কমলাপুর স্টেশনে হানা দেওয়ায় চিত্র পাল্টে গেছে।

পার্বতীপুর যাওয়ার জন্য নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল মজিদ। তিনি বলেন বলেন, “আগে টিকেট বাইরে বিক্রি করে দিত। এইবার তো দুদকের টিম আইসা খোঁজখবর নিছে। এই কারণে টিকেট বাইরে বিক্রি করার সুযোগ পায় নাই। এ জন্যই কাউন্টারে টিকেট পাইতেছি।"

টিকেট বিক্রির ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করে রাজশাহীর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট প্রত্যাশী সরকারি চাকুরিজীবী আবুল হাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় টিকেট বিক্রি করায় এখানে ভিড় কম। এখানে সারাদেশের ঈদের ট্রেনের টিকেট বিক্রি হত। অনেক লোক সমাগমের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হত। এবার সেটি নাই।

“এছাড়া এবার কাউন্টারে টিকেট বেশি আছে মনে হচ্ছে। কারণ গতবার দেখেছি সাড়ে ৮টার দিকেই এসি টিকেট শেষ হয়ে যেত। ১১টা সাড়ে ১১টায় শোভন চেয়ারের টিকেট শেষ। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম।"

এবার নিয়মের বাইরে কাউকে টিকেট দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে রেলমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রী-এমপিরা পদমর্যাদা অনুযায়ী টিকেট পাবেন। কিন্তু তাদের পরিচয়ে তাদের আত্মীয় স্বজন, কর্মচারীরা এসে টিকেট নিয়ে গেলে তো ইকুইটি থাকল না। এজন্য মন্ত্রী এমপিরা তাদের পরিবার নিয়ে ট্রেন যাত্রা করতে চাইলে আমরা ব্যবস্থা করব। তাদের জন্য আলাদা কোচ থাকবে। কিন্তু যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা টিকেটে হাত দিব না।”