রেলের টিকেটের জন্য তেজগাঁওয়ে ভোগান্তি চরমে

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রেলের আগাম টিকেট বিক্রির শেষ দিনেও দুর্ভোগে নাকাল হতে হয়েছে রাজধানীর তেজগাঁও রেল স্টেশনে আসা টিকেটপ্রত্যাশীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2019, 08:23 AM
Updated : 26 May 2019, 12:15 PM

রেলের সার্ভারে বিপত্তি, স্বজনপ্রীতি ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ফলে টিকেট পেতে যাত্রীদেরকে দিনে রাতে ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছে।

এবছর প্রথমবারের মতো কমলাপুর ছাড়াও তেজগাঁও, বনানী, বিমানবন্দর ও ফুলবাড়িয়া নগর কাউন্টার থেকে রেলের আগাম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। গত ২২ মে ২৯ মের আগাম টিকেট বিক্রির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল কার্যক্রম। রোববার শেষ দিনে দেওয়া হয়েছে ৪ জুনের আগাম টিকেট।

সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফ্ল্যাটফর্ম ছাড়াও বাইরের রাস্তায় কয়েক সারি টিকেট প্রত্যাশী একাধিক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, যারা আগের দিন বিকাল ৩টা থেকে অপেক্ষমাণ। দুটি কাউন্টারে পুরুষ যাত্রীদের জন্য এবং একটি কাউন্টারে নারী ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় বিক্রি শুরু পর বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০টি টিকেট। সেই হিসাবে দেড় ঘণ্টায় প্রতিটি কাউন্টার থেকে গেছে মাত্র ৩০টি টিকেট। একেকজন ক্রেতার হাতে টিকেট তুলে দিতে সময় লেগেছে গড়ে তিন মিনিট।

অবশ্য পুরুষ কাউন্টারে একজন কাউন্টারকর্মী জানান, কিছুক্ষণ পর পর সার্ভার গতিহীন হয়ে পড়ছে। ফলে অনেক সময় ১০ মিনিটেও একটি টিকেট আসছে না। আর সার্ভার যখন ঠিক হচ্ছে তখন এক মিনিটেই একজন টিকেট প্রত্যাশীর হাতে টিকেট তুলে দেওয়া যাচ্ছে।

ময়মনসিংহগামী হিরামন খান নামের এক যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শেষ দিনের টিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে আগের দিন বিকাল ৩টায় স্টেশনে এসে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। রাতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের টোকেন দেওয়া হলে তিনি পান ৮০ নম্বর সিরিয়াল। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টায়ও অন্তত ২০ জনের পেছনে পড়ে আছেন তিনি।

“একেকজনকে টিকেট দিতে ৫/১০ মিনিট সময় খেয়ে পেলতেছে। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে এখানে অপেক্ষা করতেছি। পরিবারের লোকজন যাবে বলেই এতো কষ্ট করা। শুধু নিজের জন্য হলে এতো কষ্ট না করে দাঁড়িয়ে চলে যেতাম,” বলেন হিরামন।

তার মতো একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে ৮০ নম্বর সিরিয়ালে থাকা জামালপুরগামী যাত্রী স্বাধীনের। মোখলেছ নামের আরেক যাত্রীর সিরিয়াল দেখা গেছে ৩৭৩ নম্বর।

 

বেলা ১২টার দিকে তিনি বলেন, “এখন একশ সিরিয়াল পার হয়নি। এখন বিকাল ৪টার মধ্যে আমার সিরিয়াল আসবে কিনা সন্দেহ।”

এদিকে মহিলা কাউন্টারে সামনের অংশটি ঘিরে রেখেছেন স্থানীয় দালাল চক্র। তারা দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকেট সংগ্রহ করে তা চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অপেক্ষমাণদের অভিযোগ।

এবিষয়েজানতে চাইলে জিআরপি পুলিশের এক সদস্য বলেন, “আমরা কয়েকজন মহিলাকে ধরেছি। তাদেরকে যাচাই করতে গিয়েই কাউন্টারে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।”

তখনই মহিলাদের কাউন্টারেই আনসার সদস্যদের যাত্রীদের অনুরোধ রক্ষা করে বিনিময়ে টাকা নিতে দেখা গেছে।

জিআরপি পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের ওসি রেজাউল বলেন, তিন কাউন্টার মিলে তাদের এক প্লাটুন কর্মী দায়িত্ব পালন করছে।

তেজগাঁও স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সার্ভারে গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি কাউন্টার থেকে তাকে একবারও জানানো হয়নি। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সহ্য করে তারা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

গত চার দিনে দৈনিক কতটি করে টিকেট বিক্রি করা গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কাছে টাকার হিসাব আছে। ২২ মে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৫ টাকা, ২৩ মে ২৩ লাখ ৮ হাজার ১২৪ টাকা, ২৪ মে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ২৪৫ টাকা এবং ২৫ মে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৩ টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে।