বেকারত্বের কারণে শিক্ষায় আগ্রহ কমছে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বেকারত্বের কারণে তরুণদের শিক্ষায় আগ্রহ কমছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2019, 07:09 PM
Updated : 24 May 2019, 07:09 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় ও ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আজকে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার যেভাবে বাড়ছে সেই বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী করে না। শিক্ষার্থীরা সিভিল সার্ভিসে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। তার কারণ হচ্ছে, তার জন্য চাকরি হচ্ছে খুব জরুরি।

“কাজেই শিক্ষার এই সমস্যাকে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করতে পারব না। আমাদের দেখতে হবে গোটা আর্থ-সামাজিক অবস্থাটা কী। এইখানে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী? এইটা এক নম্বর কথা। দ্বিতীয়ত আমাদের সমাজে জ্ঞানের গুরুত্ব কমে গেছে। জ্ঞান দরকার হয় না, জ্ঞান ছাড়াই অনেক কাজ করা যায়। সেই ক্ষেত্রে জ্ঞানের যদি মর্যাদা না থাকে সমাজে তাহলে শিক্ষার আগ্রহ কেমন করে বাড়বে, শিক্ষার মান কেমন করে বাড়বে?”

শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, “জাতীয় বাজেটের শতকরা অন্তত ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। এটি খুবই যুক্তসঙ্গত দাবি এবং আমাদের জিডিপির অন্তত দুই ভাগ শিক্ষাখাতে দেওয়া উচিত। এগুলো না বাড়ালে আমরা শিক্ষার মান বাড়াতে পারব না।”

সম্প্রতি টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “এই র‌্যাংকিং কীভাবে হয়েছে সেটা আমরা নিশ্চিত জানি না। আমরা সব তথ্য সরবরাহ করতে পেরেছি কি না জানি না। টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‌্যাংকিংয়ে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, আবার অন্য একটিতে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস রুমের শিক্ষা এবং শিক্ষকদের গবেষণা এই দুটি জিনিসই খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

নিজেদের ঘাটতির জায়গা চিহ্নিত করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আমরা যদি গবেষণা না করি তাহলে কী জ্ঞান সরবরাহ করব? কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তার মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষা দান। এই শিক্ষা দানের বিষয়টি যদি আমরা দেখি তাহলে আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সমস্যাটা অনেক। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ কমেছে।

“এইটা খুব জরুরি যে, কেবল শিক্ষা দিলে হবে না দেখতে হবে যে ছেলে-মেয়েরা সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে কি না।”

অনুষ্ঠানে ডাকসু নেতৃবৃন্দ, ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়বস্তুর ওপরে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও মতামত উপস্থাপন করা হয়।

ছাত্রদের ওই সব পরামর্শ আমলে নেওয়ার কথা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় এই সকল মতামতের প্রতিফলন ঘটুক। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ এর মধ্যে আছে কি ৫০০ এর মধ্যে নাই, ১২৭তম আছে কি ১০ এর মধ্যে নাই সেটি নয়। আমরা চাই, ক্রমান্বয়ে উপরে উঠতে, ক্রম অগ্রগতি, ক্রম উন্নয়ন ঘটাতে। সেটি যদি ঘটাতে চাই তাহলে এইখানে অভিমত ব্যক্ত হয়েছে সেই অভিমতসমূহের প্রতিফলন রাখতে হবে।”

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বিটিভির মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হারুন-অর-রশীদ, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আফতাব উদ্দিন মানিক।