চেষ্টা করেও কবিতা লিখতে পারেননি মুহিত

ইংরেজি ছেড়ে বাংলা লেখালেখিতে ‘সাফল্য’ পেলেও বহু চেষ্টায়ও কোনো কবিতা লিখতে না পারার কথা জানালেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2019, 11:22 AM
Updated : 24 May 2019, 11:32 AM

দীর্ঘ কর্মজীবন পেরিয়ে এখন অখণ্ড অবসরে মুহিত; তাই গত বছরও যে সময়ে জাতীয় বাজেট নিয়ে তার ব্যস্ততার সীমা ছিল না,, এবার সেই সময়েই তিনি হাজির হন ভিন্ন ধরনের এক অনুষ্ঠানে।

শুক্রবার সকালে ঢাকার ‘বাতিঘর’ এ ঢাকা ইনিশিয়েটিভ ও অয়ন প্রকাশনীর যৌথ আয়োজনে ‘ইতিহাসভিত্তিক সাহিত্য চর্চা : লেখক-পাঠক’ অনুষ্ঠানে পাঠকের মুখোমুখি হন ৮৫ বছর পেরিয়ে আসা মুহিত। তার সঙ্গে ছিলেন কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল।

ছাত্রজীবনে আন্দোলনে সম্পৃক্ততার পর প্রশাসনে যোগ দিয়ে কূটনীতিক ও রাজনীতিক হিসেবে জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটানো মুহিত এদিন শোনান তার শিল্প-ঘনিষ্ঠ জীবনের কথা।

জন্মস্থান সিলেটের এক সাপ্তাহিক পত্রিকায় ‘কিশোর কর্নারে’ কল্পকাহিনি লেখা দিয়ে কীভাবে শুরু করেছিলেন লেখালেখি, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা, তারপর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসানের সঙ্গে নিজের সখ্যের কথা এদিন তরুণদের শোনান তিনি।

রেকর্ড সংখ্যক সময় বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব সামলে আসা মুহিত এদিন তরুণদের মধ্যে এসে মেতে ওঠেন রসিকতায়; তরুণদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নিজের জীবনের নানা স্মৃতি রোমান্থনও করেন।

পড়ে আর লিখে অবসর কাটানোর কথা আগেই জানিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত

মুহিত জানান, ষাটের দশক থেকে প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থাতেই নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতেন দৈনিক সংবাদ ও অবজারভারে।

কূটনৈতিক জীবনে এসে যেসব লেখালেখি করেছেন, তার সবটাই ইংরেজিতে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এসে টনক নড়ে তার। ইংরেজির পাশাপাশি  তিনি বাংলাতেও লেখা শুরু করেন।

“আমি দেখলাম, ইংরেজি লিখে লাভ হয় না। যে উদ্দেশ্যে আমার লেখা, তা সফল হয় না। লেখার উদ্দেশ্যে নিজেকে প্রকাশ করা। আমি দেখলাম বাংলায় লিখলে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। তখন আমি বাংলায় লেখা শুরু করি।

“ইংরেজি থেকে বাংলায় যখন লেখা শুরু করি, তখন আমার জীবনের মূল্যবান উত্তরণ ঘটেছে। এরপর আমার যত সাফল্য, যত কারুকার্য, তার কৃতিত্ব এই বাংলায় লেখালেখি।”

আলোচনার এক পর্যায়ে সলাজ হাসিতে মুহিত স্বীকার করে নেন কবিতা লেখার চেষ্টা করে ‘ব্যর্থ’ হওয়ার কথা।

“খুব আশ্চর্যান্বিত হবেন, আমি বহু চেষ্টা করেও কোনো কবিতা লিখতে পারিনি। এটা বড় রকমের... ধরনের ব্যর্থতা বলা যায়।”

রেকর্ড সংখ্যক ১২টি জাতীয় বাজেট দিয়ে রাজনীতি থেকে ছুটি নিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত

প্রবন্ধ লেখালেখিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন তার কারণও জানান মুহিত।

“প্রবন্ধ ব্যাপারটি গবেষণার। তাই খুব বেশি লেখা নেই আমার। সারা জীবনে মাত্র ৩৫টি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সব বিষয়ের উপর গবেষণা করে তবেই প্রবন্ধ লেখা হয়। আমার আগ্রহ ছিল সে গবেষণায়।”

সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাতে গিয়ে ‘ভয়ঙ্কর ব্যস্ত জীবন’ পার করে আসা মুহিত বলেন, “১৯৬২ সালে আমি যে স্পিডে লিখতাম, সেই একই স্পিডে লিখে গিয়েছি ১৯৮৫ সালে। এটা আমার বড় তৃপ্তি।”

বাংলার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলেও সাহিত্যের মানের বিচারে সবগুলোকে ‘রসোত্তীর্ণ’ বলতে নারাজ শিল্প সমঝদার রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মুহিত।

তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঢাকার বাইরেও যেসব প্রকাশনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, সেসবের তালিকা প্রকাশ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।