ভোটের পর মানুষ রাস্তায় নামেনি বলে ‘আশ্চর্য’ হাফিজউদ্দিন

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর রাজপথে আন্দোলন না দেখে নিজের আশ্চর্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন নাগরিক সংগঠন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2019, 11:34 AM
Updated : 23 May 2019, 11:51 AM

দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “চোখের সামনে দেখলাম সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ধ্বংস হয়ে গেল।

“তাই রাষ্ট্রের মেরামত জরুরি। এজন্য মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। কিন্তু গত নির্বাচনের পর মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখলাম না, এটা আশ্চর্যের।”

সাংবিধানিক পদ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী হাফিজউদ্দিন বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় একথা বলেন।

গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে সুজন।  

ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ওই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

হাফিজউদ্দিন বলেন, “আমাদের দেশে যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আবারও প্রমাণিত হয়েছে।”

এই গোলটেবিলে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমরা অত্যন্ত সংকটময় সময় পার করছি। দেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই। এটা কিন্তু ভয়ানক অবস্থা। দেশে আইনের শাসন ফিরে না আসলে এটি একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”

সুজনের নির্বাহী সদস্য হামিদা হোসেন বলেন, “আসলে সকল ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক আচরণ দরকার হয়। দেশের কোনো রাজনৈতিক দলেই কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক আচরণ নেই। দলীয়ভাবে গণতান্ত্রিক আচরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তার প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পড়বে।”

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, “বর্তমানে ক্ষমতায় থাকলে অসীম ক্ষমতা আর বিরোধী দলে গেলে নির্যাতন ও মামলা-হামলার শেষ নেই। এই প্রবণতার কারণেই এখন কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছে না।”

ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আয়োজন করে সুজন।

এতে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এবং সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানও বক্তব্য রাখেন।

গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধে দেশের রাজনীতিতে সংস্কারের জন্য ১৮টি প্রস্তাব তুলে ধরেন সুজন সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে রাষ্ট্র মেরামত এখন সময়ের দাবি।”

গত কয়েক মাসে সুজনের পক্ষ থেকে সারাদেশে ১১টি আলোচনা সভায় উঠে আসা সুপারিশ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে ১৮ দফা প্রস্তাব তৈরি করা হয় বলে দিলীপ জানান।

তিনি বলেন, “এককালে এদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা হলেও বর্তমানে তা অনেকাংশেই অপরাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়নের শিকার। কিন্তু জনকল্যাণমুখী রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের বিকল্প নেই, যার জন্যও প্রয়োজন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার।”

রাজনৈতিক সংস্কারের ব্যাখ্যায় দিলীপ বলেন, “আমাদের সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সংবিধানের সেই অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আমরা ধরে রাখতে পারিনি। তাই আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনা দরকার।”

নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাবও দিয়েছে সুজন। তাদের অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সংসদ কার্যকর করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত, মানবাধিকার সংরক্ষণ, আর্থিকখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।