যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে এবারই প্রথম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে চারটি জায়গা থেকে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি ই-টিকেটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ টিকেট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।
সে অনুযায়ী বুধবার সকাল ৯টা থেকে কাউন্টারগুলোতে ৩১ মের টিকেট বিক্রির মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু সকাল থেকেই রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট কাটতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
ই-টিকেট সংগ্রহ করতে না পেরে সকালে অনেকেই ছুটছেন স্টেশনের দিকে। কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টারে আগের রাত থেকে অপেক্ষমাণ টিকেটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তারা।
“সিএনএসবিডি কাঙ্ক্ষিত যাত্রী সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সেপ্টেম্বরে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি হওয়ার কথা তা আর কথা হবে না।”
এর আগে বেলা ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন। তারপর তারা রেল স্টেশন ম্যানেজারসহ রেলের ও সিএনএসবিডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সাড়ে ১২টার দিকে তারা চলে যান
যাওয়ার আগে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “টিকেট না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা এসেছি। তবে অভিযোগগুলো অ্যাপের মাধ্যমে ও অনলাইনে টিকেট কিনতে না পারার; কাউন্টারে টিকেট বিক্রি নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই।
“এ বিষয়ে আমরা সিএনএসবিডির কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনে আমাদের প্রতিবেদন জমা দিব।”
সকাল থেকে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট কেনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শান্তিনগরের গৃহিণী আসমা আরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে এসেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা ঈদের আগে দিনাজপুর যাব। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য সকাল থেকে চেষ্টা করছি। পারলাম না। অ্যাপে ঢোকাই যাচ্ছে না। এজন্য আমি এখানে চলে এসেছি। বাসায় ছেলেকে বলে এসেছি সে যেন মোবাইলে চেষ্টা করে টিকেট কেনার।”
মাহবুব কবির মিলন নামে একজন বলেন, “সকাল নয়টা থেকে রেলওয়ের অ্যাপ খালি ঘুরছে আর ঘুরছে। টিকেট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সিএনএসবিডির অনলাইন অব্যবস্থাপনা এজন্য দায়ী।”
ফাইয়াজ হোসেন নামে একজন বলেন, “এই চোরের দেশে আর কি আশা করা যায়? কোনো বছর ঈদেই আমরা অনলাইনে টিকেট পাই না। সিএনএস নামক বিশ্বচোর, রেলওয়ে নামক বিশ্ববাটপারের কারসাজিতে। মাননীয় রেলসচিব, মাননীয় রেলমন্ত্রী! আপনারা সৎ ও কর্মনিষ্ঠ বলেই আমরা মন থেকে বিশ্বাস করি। তাহলে কেন আপনারা এই দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছেন না?"
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিএনএসবিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনির উজ-জামান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহারকারী টিকেট নিতে চেষ্টা করছে। ফলে সার্ভারের উপর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যেটা সার্ভার নিতে পারছে না। একারণে অনেকেই ইন্টারনেট থেকে ও অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট নিতে পারেননি। তবে টিকেট বিক্রি বন্ধ নেই।
তার দাবি, বুধবার কাউন্টারের জন্য বরাদ্দ ২০ হাজার ২৩৫টি টিকেটের মধ্যে বেলা ২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৪০টি টিকেট বিক্রি হয়েছে, যা বরাদ্দকৃত টিকেটের ৫২ শতাংশ। আর ই-টিকেটিংয়ের জন্য বরাদ্দ ১১ হাজার ১৪৫টির মধ্যে একই সময় পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৮০টি টিকেট বিক্রি হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫৭ শতাংশ।
ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং চারটা বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকেট বিক্রি হবে।
কমলাপুর স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে পাঁচ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপসে আট হাজার ১৫১টি টিকেট বিক্রি হবে।
তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী পাঁচটি ট্রেনের তিন হাজার ৪৪৪টি টিকেট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে বিক্রি হবে।
বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকেট বিক্রি হবে। ৬৪৪টি টিকেট অনলাইনে বাকি ৬১৪টি টিকেট কাউন্টারে দেওয়া হবে।
ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৫৪৮টি টিকেট বিক্রি হবে। এরমধ্যে দুই হাজার ২৫১টি টিকেট অনলাইনে এবং দুই হাজার ২৯৭টি টিকেট কাউন্টারে বিক্রি হবে।
আজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকেট। বিশেষ ট্রেনের টিকেট বিক্রি হবে ২৪ মে থেকে।