দুদক চেয়ারম্যানের মুখে টিআইবির প্রশংসা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) ‘একচোখা’ বলার আড়াই মাসের মাথায় এবার সংস্থাটির কাজের প্রশংসা করলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2019, 05:46 PM
Updated : 21 May 2019, 05:46 PM

মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বেসরকারি খাতে দুর্নীতি বিষয়ে টিআইবি’র ভূমিকা নিয়ে বৈঠক করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সিএমআই’র জ্যেষ্ঠ গবেষক ইনগি এমুন্ডসেন ও দুদক চেয়ারম্যান।

বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, “সার্বিকভাবে টিআইবি ভালো কাজ করছে। তারা তাদের গবেষণার মাধ্যমে দুর্নীতির উৎস শনাক্তকরণসহ তা নিরসনে কিছু কাজ করছে।”

এর আগে গত ৫ মার্চ  যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডি, সুইডিশ ও ডেনিশ দূতাবাসের জেনিভাভিত্তিক নীতি-কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বস নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কাজ নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের মূল্যায়ন জানতে চান।

ওই দিন ইকবাল মাহমুদ বলেন, “জনগণের মাঝে টিআইবির ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। তবে এর কিছু সমালোচনাও শোনা যায়।

“সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল কোনো ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করা উচিৎ। তাদের একচোখা হলে চলবে না, দুচোখা হতে হবে।”

তবে এদিন ফাহমিদা খাতুন ও ইনগি এমুন্ডসেনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “টিআইবির সঙ্গে দুদকের সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সঙ্গে কমিশনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান।”

তিনি বলেন, “টিআইবি শিক্ষা বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষায় যে সকল মেগা কর্মসূচি রয়েছে এগুলোর প্রান্তিক পর্যায়ের কার্যক্রমের ওপর গবেষণা করতে পারে।

”এতে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্নীতি-অনিয়ম সম্পর্কে সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ যেমন সচেতন হবেন, তেমনি তৃণমূল পর্যায়েও দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বাড়বে।”

একইভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবির গবেষণা থাকলে সরকারি পরিষেবার ত্রুটি-বিচ্যুতি সমাধানের গবেষণালব্ধ সুপারিশও পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

বেসরকারি খাতের দুর্নীতি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এক্ষেত্রেও দুর্নীতি রয়েছে। তবে সরাসরি এসব দুর্নীতি দুদকের আওতায় নেই। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির ঘটনা যখন ঘটে তখন দুদকের হস্তক্ষেপ করার আইনি সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং দুদক এ দায়িত্ব পালনও করছে।”

টিআইবির ভূমিকা নিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশে সুশাসনের জন্য অনেক আইন রয়েছে, তবে এসব আইনের প্রয়োগের সমস্যা রয়েছে।

“ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট কেন হচ্ছে না? এর মূলে রয়েছে এসব আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া এবং দুর্নীতি। এক্ষেত্রে টিআইবি এবং সিপিডির মতো প্রতিষ্ঠান গবেষণার মাধ্যমে দুর্নীতি-অনিয়মের কারণ, ধরন, ব্যাপকতা শনাক্ত করে তা প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়ন করতে পারে।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “কমিশনের সক্ষমতায় কিছুটা ঘাটতি হয়ত রয়েছে, তা অতিক্রমের জন্য কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে, এই বার্তা দিতে কমিশন সফল হয়েছে।

“আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দুর্নীতির অভিযোগে অনেক প্রভাবশালীদের আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পদ-পদবি কিংবা অন্য কোনো পরিচয়ে কাজে হচ্ছে না। দুর্নীতিপরায়ণদের আজ হোক কাল হোক জবাবদিহি করতেই হবে।”