আরও ২৮১ দিন পেল অ্যাকর্ড

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ চালাতে আরও ২৮১ কর্মদিবস সময় পেল ইউরোপীয় ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, সংক্ষেপে যা অ্যাকর্ড নামে পরিচিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2019, 10:31 AM
Updated : 2 Sept 2019, 12:31 PM

অ্যাকর্ড ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর মধ্যে সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে রোববার এ আদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

একই সঙ্গে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশটি সংশোধন করে এবং কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাকর্ডের করা আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

আদালত আদেশে বলেছে, গত ৮ মে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএর মধ্যে ২৮১ কর্মদিবসের যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, সে অনুযায়ী ৮ মে থেকে ২৮১ কর্মদিবস কাজ চালিয়ে যেতে পারবে অ্যাকর্ড।

আদালতে অ্যাকর্ডের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন কে এস সালাহ উদ্দিন, বিজিএমইএর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।

বিজিএমইএ আইনজীবী পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাকর্ডের আপিল নিষ্পত্তি করে ২৮১ কর্মদিবস কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।”

এই আইনজীবী বলেন, “অন্তবর্তীকালীন এই ২৮১ দিন অ্যাকর্ড আর বিজিএমই যৌথভাবে কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিকের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবে।”

পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে দ্বিতীয় মেয়াদে আরও তিন বছর থাকতে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে নতুন চুক্তি করেছিল অ্যাকর্ড, তার কার্যক্রম ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর স্থগিত করেছিল হাই কোর্ট।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত।  সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।

স্টিচিং বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন, শ্রম মন্ত্রণালয় ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের প্রধান পরিদর্শককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

হাই কোর্টের সে আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে চেম্বার আদালত তা স্থগিত করে আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায়। এরপর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চও কয়েক দফায় স্থগিতাদেশ বহাল রাখলে দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল অ্যাকর্ড।

গত ৮ মে বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়; যেখানে আরও ২৮১ দিন যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার শর্ত রাখা হয়েছে। এ সমঝোতা হওয়ার পর উভয় পক্ষই আপিল বিভাগে অবেদন করলে রোববার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।  

২০১৭ সালে অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়াকার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি লিমা ফেরদৌস।

চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের মে পর্যন্ত অ্যাকর্ড এদেশে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ২১ জুন নতুন চুক্তিতে আরও তিন বছর সময় বাড়িয়ে নেয় অ্যাকর্ড। সে চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে কার্যক্রম চলিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

রিটকারীর অভিযোগ ছিল, নতুন এ চুক্তিটি করতে অ্যাকর্ড সরকার, মালিকপক্ষ বা শ্রমিকপক্ষের অনুমোদন নেয়নি। ফলে এটি ‘একতরফা চুক্তি’।

পরে এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চুক্তিটি গত বছরের ১৫ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আদালত।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত জোট হচ্ছে অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যার সংক্ষিপ্ত নাম অ্যাকর্ড।

দেশের তৈরি পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন ও সংস্কার কাজ তদারক করে এ জোট।

এছাড়া আমেরিকার ক্রেতাদের নিয়েও একটি জোট হয়, যার নাম ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’- সংক্ষেপে অ্যালায়েন্স।

এদিকে আদালতের আদেশের পর বিজিএমইএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি ‘আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল’ (আরএসসি) গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

সমঝোতা চুক্ত অনুযায়ী ২৮১ দিন পর অ্যাকর্ডের যাবতীয় অবকাঠামো, কার্যক্রম এবং সম্পদ অধিগ্রহণ করবে আরএসসি। এই কাউন্সিল বাংলাদেশ সরকারের আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্ব নেবে বলে বিজিএমইএর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে বিজিএমইএ অল্প সময়ের মধ্যে অ্যাকর্ডের ঢাকা কার্যালয়ে নিজেদের ইউনিট প্রতিষ্ঠা করবে, যার নাম হবে ‘বিজিএমইএ ইউনিট’। দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বুয়েটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। এছাড়া বিজিএমইএ ইউনিট নিয়মিতভাবে আরসিসি উন্নয়নেও কাজ করবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।