ঢাকা ওয়াসা ভেঙে দুই ভাগ করার সুপারিশ

ঢাকা ওয়াসার পানির মান নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে সিটি করপোরেশনের মত দুই টুকরো করতে বলেছেন সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2019, 11:30 AM
Updated : 16 May 2019, 11:30 AM

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাজধানীবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করতে মন্ত্রণালয়কে এই ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

তবে এ বৈঠকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান উপস্থিত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদ সচিবালয় আজকের বৈঠকের বিষয়ে ওয়াসাকে জানিয়েছিল। কিন্তু তারা আসেনি। কেন আসেনি, আমরা সেই ব্যাখ্যা চেয়েছি।”

ঢাকার প্রায় দুই কোটি মানুষের জন্য পানি সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু সেই পানিতে ময়লার সঙ্গে দুর্গন্ধসহ নানা সমস্যার অভিযোগ অনেক পুরনো।

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতার হার ৫৬ শতাংশ। ঢাকার চিত্রও মোটামুটি একই রকম।

ঢাকায় দৈনিক বিশুদ্ধ পানির চাহিদা ২৩০-২৩৫ কোটি লিটার। ওয়াসা গভীর নলকূপ থেকে তুলে ১৭০ কোটি লিটার এবং বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করে আরও ৬০ কোটি লিটার পানির যোগান দেয়।

কিন্তু অনেক এলাকায় সরবরাহ লাইনে ত্রুটির কারণে পরিশোধিত পানি বাসার কলে আসার সময় নিয়ে আসে ময়লা আর দুর্গন্ধ। ওই পানি ফোটালেও দুর্গন্ধ দূর হয় না সব সময়। ওয়াসার ওই পানি পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

টিআইবি গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। আর বাসাবাড়িতে এই পানি ফোটাতে বছরে পোড়াতে হয় ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস, যার আর্থিক মূল্য ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এরপর সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। তিনি দাবি করেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি শতভাগ বিশুদ্ধ।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন বেশ কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, “স্থানীয় সরকার বিভাগের ২৭২টি প্রকল্প নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি ১০ ভাগের কম। কমিটি এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং ঢাকা ওয়াসার প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়া এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন গৃহীত প্রকল্পের বিষয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিতে সুপারিশ করে কমিটি।

বৈঠকে ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশনগুলো থেকে কোনো কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং ব্যাখ্যাসহ আগামী বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।

আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে কমিটির সদস্য নুর-ই-আলম চৌধুরী, শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসান আদেলুর রহমান এবং ওয়াসিকা আয়শা খান উপস্থিত ছিলেন।