ওয়াসা এমডির স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনেই ময়লা পানির স্বীকারোক্তি

ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দাবি করলেও তারই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে রাজধানীর ১০টি অঞ্চলের ৫৯টি এলাকায় ময়লা পানির তথ্য উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2019, 10:53 AM
Updated : 16 May 2019, 06:10 PM

গত তিন মাসে ওয়াসা লিংক ১৬১৬২ এ ওয়াসা এসব এলাকা থেকে অভিযোগ পেয়েছে। সেসব এলাকা উল্লেখ করে গত ১৩ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ওই প্রতিবেদন দেয় ওয়াসা, যা বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।  

এলাকাগুলো

মডস জোন-১: যাত্রাবাড়ি, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মাণ্ডা, ধোলাইপাড় ও মাতুয়াইল।

মডস জোন-২: ভাগলপুর, লালবাগ, বকশীবাজার ও শহীদনগর।

মডস জোন-৩: জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতেরগলি ও মোহাম্মদপুর।

মডস জোন-৪ শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মনিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর।

মডস জোন-৫: মহাখালী ও তেজগাঁও।

মডস জোন-৬: সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ ও পরীবাগ।

মডস জোন-৭: কদমতলী, ধনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ, মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনিরআখড়া, কোনাপাড়া ও মুসলিম নগর।

মডস জোন-৮: বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা ও ভাটারা।

মডস জোন-৯: উত্তরা, খিলক্ষেত, ফায়েদাবাদ, মোল্লারটেক ও রানাভোলা।

মডস জোন-১০: কাফরুল, কাজীপাড়া, মিরপুর, কচুক্ষেত ও পল্লবী।

এসব এলাকার পানিতে ময়লা পানির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওয়াসার এমডি স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে। 

হাই কোর্টের অদেশে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, এই ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৬৫টি। এই ১০৬৫টি নমুনা করে তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়ণিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানি পরীক্ষায় এ মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন।

এরপর আদালত এ বিষয়ে মতামত জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আসতে বলেছে আদালত।

আগামী ২১ মে সকাল সাড়ে ১০টায় এই অধ্যাপককে আসতে বলা হয়েছে বলে জানান রিট আবেদনকারী আইনজীবী।

আদালতে স্থানীয় সরকারের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। আর ওয়াসার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এম মাসুম।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী তানভীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য কত টাকা ব্যায় হবে, সেটা জানানোর কথা ছিল। সেটা আজকে প্রতিবেদন আকারে দিয়েছে।

“গত তিন মাসে ২৯২ জন গ্রাহকের অভিযোগের মধ্যে ঢাকার ১০টি জোনের ৫৯টি এলাকার পানি সবচেয়ে দূষিত বলে ওয়াসারা এমডি তাকসিম এ খান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।”

নমুনা পরীক্ষার জন্য ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা খরচের হিসাব দেওয়ার কথা জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “এই টাকা যেহেতু বেশি, তাই কোর্ট মনে করছে যদি কম নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় ধারাবহিকভাবে, সেক্ষেত্রে খরচটা কমানো যায় কি না? কিংবা সামগ্রিক ফলটা আসবে কি না?

“কোর্ট এবং আইনজীবী যেহেতু কেউই এ বিষয়ে এক্সপার্ট না এবং একজন এক্সপার্টের মতামত দরকার, তাই কমিটিতে যে তিনজন আছেন তাদের মধ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের মতামত জানতে তাকে ২১ মে সাড়ে ১০ দশটায় আসতে বলা হয়েছে।”

টিআইবির এক প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত মাসে ওয়াসার এমডি তাকসিম দাবি করেছিলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। তার ওই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

তাকসিম এ খান

আইনজীবী তানভীর বলেন, “আমার একটি আবেদন ছিল। ওয়াসার এমডি সম্প্রতি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন যে, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। এর ফলে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। সেই কারণে উনি যাতে আর কোনো স্টেটমেন্ট না দেন, সে জন্য আবেদনটা করেছিলাম।

“কারণ উনার স্বাক্ষরিত যে রিপোর্টটা সেখানে ৫৯টি এলাকার পানি উনি নিজেই বলেছেন দূষিত। যেহেতু উনি এক জায়গায় বলেছেন, শতভাগ সুপেয় পানি আবার উনার দেওয়া প্রতিবেদনে ৫৯টি এলাকার পানি সবচেয়ে দূষিত, সেক্ষেত্রে এটা তো স্ববিরোধী বক্তব্য।”

বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন ও প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে গত বছর ১৪ অক্টোবর হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন তানভীর আহমেদ।

ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত পানি পরীক্ষার নির্দেশনার পাশাপাশি রুলও জারি করে।

গত বছর ৬ নভেম্বর হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

এ কমিটির দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠনও করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগে কাজ করলে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে কমপক্ষে চার মাস সময় প্রয়োজন।

আরও খবর