ভূমি অধিগ্রহণে ৭ ধারার নোটিসের পর অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়: মন্ত্রী

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৭ ধারার নোটিস জারির পর কারো কোনো অভিযোগই গ্রহণযোগ্য হবে না বলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 06:23 PM
Updated : 15 May 2019, 06:23 PM

ভূমি অধিগ্রহণের সময় অসাধু চক্র যেন টাইটেল মামলা করতে পারে সেজন্য শিগগিরই এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার তেজগাঁওয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে ‘ভূমি জরিপ কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান।

মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৭ ধারার নোটিস জারির পর প্রায়ই দেখা যায় মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মাঠ পর্যায়ে কোনো কোনো অসাধুচক্র যোগসাজশ করে আরেকজনকে দিয়ে টাইটেল মামলা করায়।

“৩ এবং ৪ ধারার নোটিশ জারি করার পরই কেবল শেষবারের মত ৭ ধারার নোটিস জারি করা হয়। সুতরাং জনভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ৭ ধারার নোটিস জারির পর আর কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না মর্মে আমরা শীঘ্রই পরিপত্র জারি করতে যাচ্ছি।”

স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭

ধারা ৭। (১) সরকার, কমিশনার বা, ক্ষেত্রমত, জেলা প্রশাসক কর্তৃক, ধারা ৫ বা ধারা ৬ এর অধীন কোনো স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইলে, জেলা প্রশাসক তদ্‌মোতাবেক দখল গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়া নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির উপর বা উহার নিকটবর্তী সুবিধাজনক ও দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে একটি সাধারণ নোটিশ জারি করিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত নোটিশে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবকৃত স্থাবর সম্পত্তির বিবরণ এবং উক্ত সম্পত্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অথবা তাহার মনোনীত প্রতিনিধিকে নোটিশ জারির ১৫(পনের) কার্যদিবস অথবা জাতীয় গুরত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৭(সাত) কার্যদিবস পর জেলা প্রশাসকের নিকট নোটিশে বর্ণিত সময় এবং স্থানে হাজির হইতে হইবে এবং উক্ত সম্পত্তিতে তাহাদের প্রত্যেকের দাবির পরিমাণ এবং ক্ষতিপূরণে তাহাদের স্বত্বের অংশ উল্লেখ করিতে হইবে মর্মে বর্ণনা থাকিতে হইবে।

(৩) অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবকৃত স্থাবর সম্পত্তির দখলকার, যদি থাকে, এবং জ্ঞাত বা বিশ্বাসযোগ্য সকল স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ধারিত ফরমে একই পদ্ধতিতে নোটিশ জারি করিতে হইবে।

(৪) জেলা প্রশাসক নোটিশের মাধ্যমে, নোটিশ জারির ১৫(পনের) কার্যদিবস অথবা জাতীয় গুরত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৭(সাত) কার্যদিবস পর, নোটিশে উল্লিখিত স্থানে সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তিতে অথবা উহার কোনো অংশে অংশীদার হিসাবে, বা বন্ধকগ্রহীতা হিসাবে অথবা অন্য কোনো উপায়ে কোনো দাবি থাকিলে এবং উক্ত দাবির প্রকার, দাবিদারগণের নাম এবং দাবির ফলে প্রাপ্ত বা প্রাপ্য লভ্যাংশ বর্ণনাসহ যথাসম্ভব বাস্তবভিত্তিক একটি বিবরণী যে কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দাখিল বা হস্তান্তর করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন।

(৫) এই ধারায় বর্ণিত বিবরণী দাখিল বা হস্তান্তর করিবার জন্য আদেশপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তি Penal code, 1860 (Act XLV of 1860) এর section 175 এবং 176 এর মর্মানুযায়ী উক্ত বিবরণী দাখিল বা হস্তান্তর করিবার জন্য আইনত বাধ্য বলিয়া গণ্য হইবেন।

মাঠ পর্যায়ে জনভোগান্তি দূর করা এখন ভূমি ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সাইফুজ্জামান বলেন, জনস্বার্থে কর্মকর্তাদের নিজেদের নেতৃত্ব ও গুণাবলি প্রয়োগ করে অধীনস্থদের থেকে কাজ আদায় করে নিতে হবে।

“দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন যেন টেকসই হয় সেজন্য আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের মাইন্ডসেট চেইঞ্জ করতে হবে। গতানুগতিক চিন্তা করলে কোনো লাভ হবে না। গুণগত পরিবর্তন আনতে পারলে এবং সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করতে পারলে কাজ অনেক সহজ হবে।

ভূমি সংক্রান্ত কাজে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত শোধরানোর পরামর্শ দিয়ে সাইফুজ্জামান বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই অনিয়মের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা অন্যায় করবে তারা কেউই রেহাই পাবে না।

ভূমিমন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে ১ কোটি ৪৬ লাখ খতিয়ান ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এছাড়া সেবাগ্রহীতাদের সুবিধার্থে অভিযোগকেন্দ্র গঠনের জন্য হটলাইন, সরকারের সঙ্গে ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন লেনদেনের জন্য ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালুকরণের জন্য একটি পেমেন্ট গেটওয়ে স্থাপন, অনিবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দেওয়ার জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু এবং ল্যান্ড ব্যাংক করার বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তসলীমুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পেশাজীবীরা আলোচনায় অংশ নেন।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আলীম আখতার খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।