সামনে এলো এডিটরস গিল্ড

পাঁচ মাস আগে আত্মপ্রকাশের পর প্রথম অনুষ্ঠান করল এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 03:40 PM
Updated : 15 May 2019, 11:05 PM

বাংলাদেশের সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকীয় নেতৃত্ব নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির প্রথম অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের পাশাপাশি ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরাও অংশ নেন।

বুধবার ঢাকার লেইক শোর হোটেলে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করে এডিটরস গিল্ড। গত বছরের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরুর পর এটাই ছিল সংগঠনটির প্রথম অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদীসহ এডিটরস গিল্ড-এর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমানের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবদুল মঈন খান।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অংশ নেন অনুষ্ঠানে।

ঢাকার লেইক শোর হোটেলে বুধবার এডিটরস গিল্ডের প্রথম অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশের সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদী সংগঠনটি গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সবার সামনে তুলে ধরেন।

অতিথিদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী নিজের প্রত্যাশা জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলেন, “কখনও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আমি সন্দিহান হয়ে উঠি। গণমাধ্যম এখন স্বাধীনতার জন্য লড়ছে।

“আমি আশা করব, গণমাধ্যম এখন আমাদের পথ দেখাতে পারবে। আমরা কীভাবে সমাজের ভালোর জন্য, মানবতার জন্য আর নব প্রজন্মের জন্য কাজ করতে পারি, সেজন্য গণমাধ্যম আমাদের পথ দেখাতে পারবে।”

সোশাল মিডিয়ার ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে মূল ধারার গণমাধ্যমের সম্পাদকরা ভাবতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।

বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মঈন খান বলেন, “গণমাধ্যম কিন্তু একটি চলমান সরকারের পতনও ঘটাতে পারে কখনও কখনও। গণমাধ্যমকে তাই সমাজে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।”

এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, এডিটরস গিল্ড লড়বে সম্পাদকীয় স্বাধীনতার জন্য।

“এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এর সদস্যরা সম্পাদকীয় স্বাধীনতার জন্য লড়বেন এবং সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বাড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করবেন। এর সদস্যরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চান যেখানে ‘সেলফ সেন্সরশিপকে’ নিরুৎসাহিত হবে।”

সরকারের প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশকে সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন এডিটরস গিল্ড-এর সভাপতি।

সম্পাদক পরিষদ নামে সম্পাদকদের একটি সংগঠন থাকারও পরও কেন এডিটরস গিল্ড করতে হল, তার ব্যাখ্যাও দেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

তিনি বলেন, “উত্তরটা সহজ। তারা সম্ভবত দেশে সংবাদের পাঠক-দর্শকের দুই শতাংশেরও প্রতিনিধিত্ব করেন না। সার্কুলেশন হারাতে থাকা গুটিকয়েক পত্রিকা নিশ্চিতভাবেই দেশের কোটি সংবাদ পাঠক-দর্শকের সঠিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।”

শুধু মুদ্রিত সংবাদপত্রের সম্পাদকদের নিয়েই গড়ে উঠেছে সম্পাদক পরিষদ, তাও মুদ্রিত সব সংবাদপত্রের সম্পাদক তার সঙ্গে যুক্ত নন। 

আর এডিটরস গিল্ড গঠিত হয়েছে ইন্টারনেট, টেলিভিশন, রেডিও ও মুদ্রিত সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় সব নেতৃত্বের অংশগ্রহণে।

সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠনের প্রথম অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নেন।

কূটনীতিকদের মধ্যে অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো; ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ; ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন এসেছিলেন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে।

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লেকেন, ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েইজ, ফ্রান্স দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রাঙ্ক গ্রুয়েটজমাখার টিকোর্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) এরিকা হ্যাজনস, আমেরিকান সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জসুয়া ক্যাম্পসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।

বাংলাদের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজিউল হাসানও যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শামীম চৌধুরী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার, ব্যাংকার ও বিআইবিএমের প্রশিক্ষক হেলাল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন অনুষ্ঠানে।

.

কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

সাংবাদিকদের মধ্যে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আলতামাশ কবির, সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, স্বরগম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন, আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান, নিউজ টোয়েন্টিফোরের রাহুল রাহা।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমাও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

দুরন্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান, ডট সম্পাদক মোস্তফা খালিদ পলাশও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদীসহ এডিটরস গিল্ডের সদস্য জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, দেশ টিভির সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, এশিয়ান এইজের এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান শোয়েব চৌধুরী, মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ প্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহবুদ্দিন অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।

ইফতার অনুষ্ঠানে মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামী চিন্তাবিদ, দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ।

সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং সাংবাদিকতা পেশার উৎকর্ষ বাড়ানোর লক্ষ্যে এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর।

শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি করলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে ফেলে সংগঠনটি। সঙ্গে কয়েকটি উপকমিটিও করা হয়। এরমধ্যে সদস্য সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

অনুষ্ঠানের আগে এডিটর গিল্ডের নির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় লেইক শোর হোটেলে।

ইফতার অনুষ্ঠানের আগে এডিটরস গিল্ডের নির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় লেইক শোর হোটেলে, যাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ছিলেন

অনুষ্ঠানে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, এ বছরই এডিটরস গিল্ড-এর প্রথম জাতীয় সম্মেলন ও সাধারণ সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানেই সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আরও বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।