এডিটরস গিল্ড লড়বে সম্পাদকীয় স্বাধীনতার জন্য: তৌফিক ইমরোজ খালিদী

সম্পাদকীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের প্রত্যয় জানালেন এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ-এর সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 02:33 PM
Updated : 21 Dec 2019, 03:55 PM

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এবং স্বআরোপিত ‘সেন্সরশিপ’ নিরুৎসাহিত করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করাও তাদের লক্ষ্য।

বাংলাদেশের সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকীয় নেতৃত্ব নিয়ে সদ্য গড়ে ওঠা এডিটরস গিল্ডের প্রথম অনুষ্ঠানে এই সংগঠনটি গঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এভাবেই সবার সামনে তুলে ধরেন এর সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

ছাপানো ও ইন্টারনেট সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ সংবাদ প্রকাশনা ও পরিবেশনার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের সব ধরনের মাধ্যমের সম্পাদকীয় নেতাদের নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে এডিটরস গিল্ড।

বুধবার ঢাকার লেইক শোর হোটেলে এই সংগঠনটি আয়োজন করে ইফতার অনুষ্ঠানের, যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি-নির্ধারক ও রাজনীতিকদের অনেকে অংশ নেন, যোগ দেন ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী শিবিরে থাকা রাজনীতিকরা একসঙ্গে বসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান।

অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসেছিলেন জাসদ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। যোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনসহ ঢাকায় কর্মরত প্রায় সব দেশের কূটনীতিকরা এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে।   

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী সাংবাদিকতা ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নৈতিকতা নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা জানি, আমাদের সাংবাদিকতায় নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। আমাদের সেই সব দিনের কথা মনে আছে, যখন সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা গুরুতর অভিযোগ কোনো ধরনের যাচাই করা ছাড়াই শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।

“সেই সব সংবাদপত্রের সম্পাদকরা সাংবাদিকতার নামে গুরুতর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছেন।”

সাংবাদিকতায় নৈতিকতা নিয়ে বহু কথা হলেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করেন এডিটরস গিল্ড-এর সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

এই প্রেক্ষাপটে এডিটরস গিল্ড-এর পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যম সংশ্লিষ্টদের জন্য নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলার কথা জানান তিনি।

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এর সদস্যরা সম্পাদকীয় স্বাধীনতার জন্য লড়বেন এবং সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বাড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করবেন।

“এর সদস্যরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চান যেখানে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ নিরুৎসাহিত হবে।”

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ এর কিছু অংশকে সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন এডিটরস গিল্ড-এর সভাপতি।

সাংবাদিকতার জন্য অন্তরায়মূলক ধারাগুলো তুলে নেওয়ার আশ্বাস সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।

“আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই,” বলেন তৌফিক খালিদী।

সম্পাদক পরিষদ নামে সম্পাদকদের একটি সংগঠন থাকারও পরও কেন এডিটরস গিল্ড করতে হল, তার ব্যাখ্যাও দেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

“উত্তরটা সহজ। তারা সম্ভবত দেশে সংবাদের পাঠক-দর্শকের দুই শতাংশেরও প্রতিনিধিত্ব করেন না। সার্কুলেশন হারাতে থাকা গুটিকয়েক পত্রিকা নিশ্চিতভাবেই দেশের কোটি সংবাদ পাঠক-দর্শকের সঠিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।”

শুধু মুদ্রিত সংবাদপত্রের সম্পাদকদের নিয়েই গড়ে উঠেছে সম্পাদক পরিষদ, তাও মুদ্রিত সব সংবাদপত্রের সম্পাদক তার সঙ্গে যুক্ত নন। 

“সেখানে এই জায়গায় (এডিটরস গিল্ড) বাংলাদেশের সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে- ইন্টারনেট, টেলিভিশন, রেডিও ও মুদ্রিত সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নেতারা এখানে রয়েছেন,” বলেন তৌফিক খালিদী।  

প্রায় পাঁচ মাস আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এডিটরস গিল্ড যাত্রা শুরু করার কিছু দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।

এই সভায় গঠিত হয়েছিল এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সংবাদ প্রকাশক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে সভাপতি করে গঠিত এই সংগঠনে সদস্য রয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এবং দেশ টেলিভিশনের সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, এশিয়ান এইজের এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান শোয়েব চৌধুরী, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ প্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা, বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহবুদ্দিন।

এ বছরই এডিটরস গিল্ড-এর প্রথম জাতীয় সম্মেলন ও সাধারণ সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সভাপতি তৌফিক ইমরোজ খালিদী। সেখানেই সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আরও বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।