জঙ্গিদের ‘হিরো’ বানাবেন না: ডিএমপি কমিশনার 

জঙ্গিদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ বা প্রচারের সময় তাদের ‘হিরো’ না বানিয়ে ‘দেশের শত্রু’ হিসেবে মেলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2019, 03:13 PM
Updated : 6 May 2019, 03:13 PM

সোমবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রিপোর্টিং অন টেররিজম’ শীর্ষক এক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই আহ্বান জানান তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “জঙ্গিদের লক্ষ্যই হচ্ছে ভীতির পরিবেশ তৈরি করা, জনমনে নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেওয়া, নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা।

“সুতরাং এমন কোনো রিপোর্টিং করা উচিত হবে না, যে রিপোর্টে জঙ্গিবাদের পক্ষে প্রচার পায় বা সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিবাদকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করে। বরং উচিত জঙ্গিরা যে দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু, তা প্রচার করা।”

ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গিদের ‘হিরো’ হিসেবে দেখানো হলে তা তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে প্ররোচিত করতে পারে।

গণমাধ্যমের দায়িতবশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “অনেক বিষয় আছে, যা আইন করে সমাধান করা সম্ভব হয় না। কী প্রকাশ করব, আর কী করব না, নিজের বিবেকের কাছেও প্রশ্ন থেকে যায়। সেজন্য সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সেলফ সেন্সরশিপের প্রয়োজন।”

“কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট যখন অপারেশন করে, তখন রিপোর্টার লাইভ প্রচার করতে চায়। এসব দেখে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা এটাকে সাপোর্ট করে।”

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “যে খবরটা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে, যে খবরটা দেশবাসীকে ভীতি সন্ত্রস্ত করবে, তা রুখতেই আমরা সাংবাদিকদের বাধা দিই।”

গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিদের নির্বিষ করার দাবি করলেও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক হামলা ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ পুলিশকে।

আছাদুজ্জামান বলেন, “এ সংক্রান্তে আমাদের বিশেষ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হওয়া দরকার এবং আমাদের কর্মপদ্ধতি কী হবে, সে ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে আসা একান্ত প্রয়োজন।”

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্যের দাবি করে তিনি বলেন, “উন্নত বিশ্ব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারেনি, আমরা পেরেছি।

“বাংলাদেশে হলি আর্টিজানের পরে এখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। কোনো কিছু ঘটার আগেই আমরা ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি, যার ফলে আমরা সফল হয়েছি।”

কর্মশালায় বক্তব্যে বাংলাদেশের সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নিজেদের ভূমিকার কথাও বলেন আছাদুজ্জামান।

“ট্রাফিক ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে অরাজকতা চলে আসছিল। আমরা অভিযান চালাতে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলাম। ক্রাইম রিপোর্টারদের অভয়ের কারণে আমরা বড় বড় কর্মকর্তাদের ধরেছি। ৮০ শতাংশ লোক এখন উল্টো দিকে যায় না এবং ৯৫ শতাংশ লোক হেলমেট ব্যবহার করছে।”

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) যৌথ উদ্যোগে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় সিটিটিসি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম, ডিবিসির সম্পাদক জাহেদুল আহসান পিন্টু, ক্রাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ, ক্র্যাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সহ-সভাপতি মিজান মালিক, উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময়ে মনিরুল বলেন, “জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করতে চটকদারি সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জঙ্গিদের ভাষা যেমন- নাস্তিক, সমকামী, কাফের বা অন্য কোন স্পর্শকাতর কথা নিউজে এড়িয়ে চলা উচিৎ। শব্দ ব্যবহারে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।”