টিভি সংবাদে ‘স্পন্সর’ নয়: হাই কোর্ট

বিভিন্ন টেলিভিশনে শিরোনামসহ সংবাদের বিভিন্ন অংশ এখন যেভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচার হচ্ছে, তা আর করা যাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2019, 12:44 PM
Updated : 6 May 2019, 01:15 PM

সোমবার হাই কোর্টের দেওয়া এক রায়ে এতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

এই সংক্রান্ত একটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার এই রায় দেয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ সাঈদ। তার সঙ্গে ছিলেন শেখ আহসান আলী ও নাসরিন আক্তার।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান ও আনিসুল হাসান।

রায়ের পর মাসুদ সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, “সংবাদ শিরোনাম আপনি দিতে পারবেন। কিন্তু সেই সংবাদ শিরোনাম কোনো বিজ্ঞাপনদাতা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় (স্পন্সর) প্রচার করতে পারবেন না।”

কী যুক্তিতে এই রায়, তার ব্যাখ্যায় এই আইনজীবী বলেন, “কারণ পৃষ্ঠপোষকতাকারী প্রতিষ্ঠান আপনার সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কিংবা সম্পাদকীয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে এমন হতে পারে যে, ওই প্রতিষ্ঠান যেটা বলবে সেটা প্রচার হবে, যেটা বলবে না সেটার প্রচার হবে না।

“আমি দর্শক হিসেবে এবং দেশের একজন নাগরিক হিসেবে খবর দেখতে বসেছি। যদি এমনটাই হয়, সংবাদের স্বচ্ছতা নিয়ে যদি আমার সন্দেহ থাকে বা প্রশ্ন থাকে তাহলে আমি সে সংবাদ কেন দেখব? তাছাড়া এটা দর্শকের সাথে প্রতারণা।”

“এটা সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৯ অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন। তাই সংবাদ শিরোনাম বা সংবাদের বিভিন্ন অংশে স্পন্সরিং করাটা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

উদাহরণ দিয়ে এ আইনজীবী বলেন, “যেমন- ফ্রেশ সংবাদ শিরোনাম, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সংবাদ শিরোনাম, ক্লেমন খেলার সংবাদ, বিআরবি কেবল সংবাদ শিরোনাম, যমুনা ব্যাংক খেলার সংবাদ ইত্যাদি, এরকমটা করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “খবরের বিরতিতে বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আমরা না। আপনি যত খুশি বিজ্ঞাপন দেন। কিন্তু কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় তা করতে পারবেন না।”

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস বিশ্বাস বলেন, “যত খুশি বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। তবে সেটা হতে হবে খবরের আগে, পরে বা মাঝখানে বিরতি দিয়ে। কিন্তু সংবাদের শিরোনামসহ বিভিন্ন সেগমেন্টে স্পন্সর নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না।”

ফাইল ছবি

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সাবেক শিক্ষক এম এ মতিনের জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত রুল জারি করেছিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ওই রুলে বলা হয়েছিল, টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, একই সঙ্গে বিভিন্ন চ্যানেলে এভাবে সংবাদ প্রচার কেন সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে না?

তথ্য সচিব, আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টিভি, বাংলাভিশন, চ্যানেল আই ও বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

তবে পরে দেশের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলকে এই আবেদনে পক্ষভূক্ত করা হয় বলে জানান রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সাঈদ।

তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে রিট আবেদনকারীর মৃত্যুর পর ফারুক মো. হাসিব নামের একজন ব্যবসায়ী ওই আবেদনে পক্ষভুক্ত হয়ে মামলাটি কার্যক্রম চলমান রাখেন।