ঘূর্ণিঝড় ফণী: উপকূলের ৪ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2019, 07:22 AM
Updated : 3 May 2019, 11:14 AM

দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সন্ধ্যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর ২১ থেকে ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তারা।

দেশের ১৯ জেলার ১৪৭টি উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত; সেখানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস।

এই ১৯ জেলায় ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সচিব বলেন, নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকসহ রাজনৈতিককর্মীরা উপকূলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত খুলনায় এক লাখ, সাতক্ষীরায় ১২ হাজার, বাগেরহাটে ৪০ হাজার, পিরোজপুরে ৬ হাজার, বরগুনায় ৮০ হাজার, পটুয়াখালীতে সাড়ে ৩৭ হাজার, বরিশালে ৫ হাজার, ভোলায় ৩৫ হাজার, নোয়াখালীতে ১৫ হাজার, লক্ষ্মীপুরে ১২ হাজার, ফেনীতে ৫ হাজার, চট্টগ্রামে ২০ হাজার, কক্সবাজারে এক হাজার, ঝালকাঠিতে ১০ হাজার, চাঁদপুরে ৫ হাজার, শরিয়তপুরে ৮ হাজার এবং মাদারীপুরের ৪ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংবাদ সম্মেলন করে সর্বশেষ তথ্য জানানো হবে।

ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার গতির ঝেড়ো হাওয়া সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ফণী।

বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে মোটামুটি এর অর্ধেক শক্তি নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে। এরপর তা রাজশাহী, রংপুর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের ওপর দিয়ে দেশের উত্তরাংশ পেরিয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখনও ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী রয়েছে। তাই সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে। সরকারের নির্দেশনা না পেলে কেউ যেন আশ্রয়কেন্দ্রে ত্যাগ না করেন।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দেব না এজন্য ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবার স্বতস্ফূর্তভাবে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে।

“সাত হাজার আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন, চার হাজার ৭১টি প্রস্তুত করেছি। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র করার জন্য। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে অন্যরাও এ কাজে অংশ নিচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সন্ধ্যার আগে সমস্ত লোককে আশ্রয়েকেন্দ্রে আনা হবে, একটি লোককেও রেখে আসা হবে না।”

এনামুর বলেন, মানুষের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব গবাদিপশুকেও সরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

“উপকূলীয়ে জেলার প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে ২০০ টন করে চাল এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে, একটি পরিবার এক প্যাকেট শুকনো খাবার সাত দিন খেতে পারবে।”

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা করে ডিসিদের দেওয়া আছে, যে কোনো পরিস্থিতে যে কোনো কিছু কিনতে পারবেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল, তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।