আদিম মূর্তিতে যৌনাঙ্গে গুরুত্ব নারীকে মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠায়: হাসনাত হাই

প্রাচীন যুগের অধিকাংশ মূর্তিতে নারীর যৌনাঙ্গ উপস্থাপনের পেছনে নারীকে সমাজে ‘মাতা’ হিসেবে দেখানোর আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছে বলে মনে করেন কথাসাহিত্যিক ও শিল্প সমালোচক হাসনাত আবদুল হাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2019, 05:41 PM
Updated : 2 May 2019, 05:53 PM

এই ভাবনার পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, আদিম সমাজে নারী-পুরুষ সবাই নগ্ন থাকতেন। তাছাড়া নারী দেহ থেকে পুরুষকে উত্তেজিত হতে মূর্তির প্রয়োজন হয় না।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে ‘আমিনা বশীর স্মৃতি বক্তৃতায়’ তিনি একথা বলেন।

‘শিল্পকলায় নারী: ইউরোপে ও ভারতবর্ষে আদিম যুগ থেকে মধ্যযুগ’ শিরোনামের এই বক্তব্যে হাসনাত আবদুল হাই বলেন, বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষে মেয়েরা মধ্যযুগ পর্যন্ত নারী শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পাননি।

“এখানে মেয়েরা সুচিকম, আলপনা আঁকা, পটচিত্র তৈরি ইত্যাদি লোকশিল্প শিল্পকলায় নিয়োজিত ছিল বলে জানা গেলেও তাদের নাম অজ্ঞাতই রয়ে গিয়েছে। আলপনা আঁকাকে শিল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি, কাঁথা শিল্পকেও শিল্প হিসেবে নেওয়া হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় এখনও নেওয়া হয় না।

“আমাদের দেশের কাঁথা যেগুলো আমরা বিদেশে রপ্তানি করছি, এনজিওরা নিয়ে আসছে, কোনো কাঁথায় কোনো মেয়ের নাম দেখি না আমরা। কোন শিল্পী যে দিনের পর দিন খেটে এভাবে নিপুণভাবে কাজ করছে এখনও নাম নেই।”

হাসনাত আবদুল হাই বলেন, “আদিম যুগের প্রায় সব মূর্তিতেই নগ্নিকা তো বটেই নগ্ন দেহের মধ্যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নারীদের গোপন অঙ্গকে। স্তন, নিতম্ব, জননেন্দ্রিয় এগুলোকে খুব সুস্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে। এখন এই যে এই মূর্তি যেখানে শুধু নগ্ন অবস্থায় নয় তাদের যে দেহের বিশেষ অংশগুলোকে এত স্পষ্টভাবে খোদাই করা হয়েছে। এখানে এই নগ্নিকা মূর্তিকে কি উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়েছিল?

“পশ্চিমের বেশ কিছু ঐতিহাসিক, তারা বলে যে, এই সব মূর্তি তৈরি করা হয়েছে যৌন আবেদন সৃষ্টির জন্য। আমি সেটা মনে করি না এইজন্য যে, আদিম যুগে নর-নারী ২৪ ঘণ্টাই উলঙ্গ থাকত। নারী দেহ থেকে পুরুষকে উত্তেজিত হওয়ার জন্য মূর্তির প্রয়োজন হয় না।

“সুতরাং এটা অন্য উদ্দেশ্য আছে, সেই উদ্দেশ্যটা কী? সেটাও অনেকে বলেছেন, সেটা হল যে, মাতৃকা হিসেবে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানো। ওটা ঠিক না। কেননা তখনও এই পূজা, উপাসনা, দেবদেবী এগুলোর প্রচলন হয়নি আদিম সমাজে। আদিম সমাজে কোনো ধর্ম ছিল না। সুতরাং আমরা বলতে পারি, মূর্তিকে সামাজিক ভূমিকায় আনা হয়েছে। সামাজিক ভূমিকা কী? যে তাদেরকে মাতা হিসেবে দেখে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানো, কাল্ট ফিগার হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।”

প্রাচীন সভ্যতায় শিল্পকলায় নারীর ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “ধর্মীয় ভূমিকায় নারীদের বেশি দেখানো হয়েছে সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। এরপরেই পৌরাণিক, রাজনৈতিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সামাজিকভাবে কম দেখানো হয়েছে বিশেষ করে সাধারণ শ্রেণির নারীদের।”

এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহিম।