ফণী: শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার সিদ্ধান্ত

ঘূর্ণিঝড় ফণী শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ধরে নিয়ে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2019, 12:24 PM
Updated : 2 May 2019, 02:09 PM

সকালে শুরু করে সন্ধ্যার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে শুক্রবার দুপুরে ভারতের ওড়িষা উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে, এরপর ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাবে।

শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ভারতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে, যার অংশ হিসেবে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।

সভার শুরুতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল শুক্রবার সকালে কাজ শুরু করে সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।

প্রথমে নারী, শিশু ও বয়স্কদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার পর সেখানে (ওইসব অঞ্চলে) পাহারা রাখতে হবে, শেল্টারগুলোও পাহারায় রাখতে হবে।”

আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের নিরাপত্তায় সজাগ থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গে তারা মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।

উপকূলীয় ১৯ জেলায় তিন হাজার ৮৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ আশ্রয় কেন্দ্রই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সভায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে, এই সময়টা ক্রিটিক্যাল। উচ্চগতির বাতাস ও দমকা ঝড়ো হাওয়ার সময় সবাইকে নিরাপদে থাকতে হবে।

“ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সারা রাত বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। বাংলাদেশ যখন অতিক্রম করবে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার থাকতে পারে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার সময় এখনও হয়নি। ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শামসুদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে সবাইকে এ বিষয়ে জানাতে হবে, এজন্য বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। কারণ ঘূর্ণিঝড় আঘাতের আগে তথ্য পেলে মানুষ নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে পারবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “ভালো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, আমরা মোকাবেলা করতে পারব, প্রাণিসম্পদও রক্ষা করতে পারব।”

আশ্রয় কেন্দ্রে ঠিকমতো খাবারের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “খাবারের অভাবে কেউ যেন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ির দিকে না যায়।”

মোমবাতি ও কুপি বাতির পরিবর্তে হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এনামুর বলেন, “আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা যেন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন।”

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, “অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের প্রস্তুতি ভালো। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আগেভাগে সংবাদ পাচ্ছি, আন্তঃদেশীয় তথ্য বিনিময় হচ্ছে।

“প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বিক সমন্বয় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাওয়ার আগে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৯ জেলার ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি, তারা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত।”

নজিবুর বলেন, জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে যেন দুর্যোগ প্রশমিত হয়, জানমাল রক্ষা পায়।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সমন্বতিভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুখ্য সচিব।

“নিরন্তর মনিটরিং করব, কোথাও যদি দূর্বলতা দেখা দেয় সেটা কাটিয়ে উঠব। যত আগে জনগণকে সরিয়ে নেওয়া যাবে ঝুঁকি তত কমে।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী জানান, ঝড়ে খুলনা অঞ্চলে ১১ হাজার হেক্টর জমির ধান ঝুঁকিতে রয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র

জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।

৯৫৪৫১১৫, ৯৫৪৯১১৬, ০১৭৫৫৫৫০০৬৭ নম্বরে ফোন করে, ৯৫৪৯১৪৮, ৯৫৪০৫৬৭ নম্বরে ফ্যাক্সে এবং ndrcc@modmr.gov.bd ইমেইল করা যাবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম

ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়টি ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে বলে এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে।

সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৮০১/ক কক্ষে স্থাপিত এই কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর ০২-৯৫৪৬০৭২।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি তথ্য ও নির্দেশনা আদান-প্রদানের জন্য এ কন্ট্রোল রুম খোলা  হয়েছে বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।