পুঁজিবাজার নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে তাদের শঙ্কিত না হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2019, 05:07 PM
Updated : 30 April 2019, 05:49 PM

তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে সব ধরনের পদক্ষেপ সরকার বাস্তবায়ন করছে।

পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তা নিয়ে কথা বলেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, “আমি বলব, খুব বেশি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা কীভাবে ঠিক করা যায়, আমি এই পার্লামেন্টে বসেই কয়েকদিন আগে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত সভা করেছি।”

বিনিয়োগেকারীদের বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

টানা দরপতনের পর ওই সব পদক্ষেপের মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট বেড়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৩ পয়েন্ট।

আগের দিন বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ফিরে গিয়েছিল ২৭ মাস আগের অবস্থানে।

তা নিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতাসহ একাধিক সংসদ সদস্য কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসবাণী আসে।

সংসদে যোগ দেওয়া বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “কেন জানি না, এ সরকার ক্ষমতায় থাকলেই শেয়ারবাজারে ধস নামে। ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজারের ধসে লাখ লাখ মানুষ সর্বশান্ত হয়েছিল।

“এখন আবার কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে ধস চলছে। বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করছেন। কিন্তু ধস ঠেকানো যাচ্ছে না। ধসের কারণ দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এই শেয়ারবাজার নিয়ে অতীতে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। এটা যেন স্থিতিশীল থাকে তার জন্য অনেক ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।

“সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনায় যা যা করা দরকার, এটা তো আমরা করে যাচ্ছি। সব রকম সুযোগও আমরা দিচ্ছি। হঠাৎ খুব বেশি ওঠে আবার পড়ে না যায়, সে ব্যাপারে যা নিয়ন্ত্রণ করার, আমরা নিচ্ছি।”

পুঁজিবাজারে কারসাজি ঠেকাতেও সজাগ থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে কেউ যদি কোনোরকম গেইম খেলতে চায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।”

সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

“শেয়ারবাজারে যারা যাচ্ছে, তাদের তো এটা জানাই উচিৎ যে, এখানে গেলে লাভও যেমন হবে, লোকসানও তেমন হবে। লাভ করলেই খুশি, আর কিছু হলেই সব সরকারের দোষ, এটা তো ঠিক না।

“এটা অনেকটা জুয়া খেলার মতো। যারা যাবে তাদেরকে এটা বিবেচনা করে যেতে হবে, কোন কোম্পানির শেয়ার কিনেছে, কোম্পানির প্রকৃত অবস্থাটা কী, সে কোম্পানিতে দিলে লাভ হবে কি না।”

ওয়াসার পানি

ওয়াসার পানি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকের বাড়ির ট্যাংক পরিষ্কার কি না, তা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে পানির ব্যাপক অভাব ছিল, হাহাকার ছিল। আমরা কিন্তু পানি সমস্যার সমাধান করেছি। এখন কিছু কিুছু জায়গার পানিতে ময়লা পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ির ট্যাংকি তারা নিয়মিত পরিষ্কার করেন কি না, সেটাও দেখার বিষয় আছে। তিন/চার মাস পরপর সেটা পরিষ্কার করার দরকার আছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে নিয়ে যাওয়ার থেকে নিজের সেই পানির ট্যাংকিটা পরিষ্কার করে কি না, সেই খবরটা আগে নিতে হবে। আর যদি এই রকম হয়, অবশ্যই ওয়াসা যে দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”

পাটকল

শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পাটকল ব্যবস্থাপনায় কোনোরকম সমস্যা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এবং কীভাবে লুটপাট বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “পাটকলগুলো লাভজনক কীভাবে করা যায়, এখানে ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটা আমাদের ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। ওই জায়গায়টায় আগে হাত দিতে হবে। যেমন বিমানে যে সমস্যাটা তা ইতোমধ্যে আমরা কাটিয়ে উঠেছি।

“আমি বলবো, যারা নিজেরা কর্মরত তারাই আত্মঘাতী কাজ করে। নিজের সম্পদ, নিজের দেশের সম্পদ সেটাকে রক্ষা না করে সেখান থেকে লুটপাটের একটা জায়গা করে নেয়। কাজেই এই লুটপাটটাকে কীভাবে বন্ধ করা যেতে পারে, এই জায়গাটাই আমাদের এখন ধরতে হবে এবং সেটা আমরা ধরছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বন্ধ পাটকলগুলো আমরা চালু করে দিয়েছি। তখনিই কথা ছিল যে, এইগুলো তারা চালু করবে। ঠিক কী কারণে এটা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা এখানে আমরা ব্যয় করেছি। বকেয়াগুলি সমস্ত দিয়ে দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের। তারপরও শ্রমিকরা বেতন পায় না, আমি মিল চালাবো আর প্রতিবার সরকারের কাছ থেকে বেতন দিতে হবে, এটা কী ধরনের কথা?”

সরকারপ্রধান বলেন, “মিল চালিয়ে লাভ দিতে না পারুক, শ্রমিকের বেতনটা তো দিতে পারবে। এখানে রহস্যটা কী? কেন এটা হচ্ছে? একটা কারণ যন্ত্রপাতিগুলো অনেক পুরনো। মেশিনারিজগুলো হয়তো পরিবর্তন করত হবে। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থাকে, কেন এরকম সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে? আরেকটা কারণ আমরা সরকারি বেতন এত বৃদ্ধি করে দিয়েছি।”

চাকরির বয়স

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর সম্ভাবনা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বয়স ৩৫ করা হলে চাকরিতে ঢুকতে ঢুকতে ৩৮ বছর হবে। ২২-২৪ বছরে আরেকজন ঢুকে তাদের মধ্যে তফাত অনেক বেশি হবে।”

এখন নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষা হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সেশনজট আছে। সেটা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

ক্রিকেট দলের জার্সি

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সির রংয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবুজ জার্সিতে লাল রংয়ে বাংলাদেশ লেখা ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে আইসিসির আপত্তি ছিল, লাল রংয়ে লেখা যাবে না, সাদা লিখতে হবে। আন্তর্জাতিক খেলায় এই ড্রেসকোড মানতে হয়। এতে যে এটা পাকিস্তানের জার্সি হয়ে গেছে তা নয়।”

সমালোচনার মুখে ইতোমধ্যে ক্রিকেট দলের জার্সির রং পরিবর্তন করেছে বিসিবি; সবুজের সঙ্গে লাল রঙের ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে জার্সিতে।

জঙ্গিবাদ

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। বাংলাদেশে আমরা শান্তি চাই।

“এখানে দুঃখ লাগে যে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কিছু মানুষকে ধর্মান্ধ করে ফেলা হয় এবং তাদেরকে ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করা হয়।”

ধর্মান্ধতা থেকে মানুষ মুক্তি পাক- এমন আশা করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাপরেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দেখলে যেন পদক্ষেপ নিই।”