ফণীর প্রভাবে রাজশাহীতে পারদ উঠেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টির দেখা না মেলায় সোমবার চলতি মৌসুমের উষ্ণতম দিনটি পার করল রাজশাহীবাসী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2019, 04:09 PM
Updated : 30 April 2019, 03:55 AM

সোমবার রাজশাহীতে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে; সারা দেশে এটাই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আশপাশের আকাশ থেকে মেঘ টেনে নিচ্ছে নিজের কেন্দ্রের দিকে। ফলে বৃষ্টিহীন বৈশাখী দিনে তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে আবহাওয়াবিদরা তাকে বলেন ‘মৃদু তাপপ্রবাহ’। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে ‘মাঝারি তাপপ্রবাহ’ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, বর্তমানে রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা আবহাওয়ার এই প্রবণতা চলতে পারে।

সোমবার রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে ৩৯ ডিগ্রি, যশোর ও কুমারখালীতে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল থার্মোমিটারের পারদ। 

দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিলেটে, ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের মধ্যে কেবল সিলেটেই কিছুটা বৃষ্টির দেখা মিলেছে এদিন।

মঙ্গলবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

২০১৮ সালের উষ্ণতম দিন ছিল ১৫ জুন; সেদিন রাজশাহীতে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০১৬ সালে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল।

২ নম্বর সংকেত বহাল

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সংকেতও বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শনিবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে এর নাম দেওয়া হয় ‘ফণী’। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলে এ নামটি প্রস্তাব করে বাংলাদেশ, যার অর্থ সাপ।

সোমবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল উত্তরে, ভারতেরে ওড়িশা উপকূলের দিকে।

ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, সোমবারই ফণী পরিণত হতে পারে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম)। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮৫ থেকে ১২০ কিলোমিটার।

আর মঙ্গলবার সকালে ফণী পেতে পারে হারিকেনের তীব্রতা। তখন একে বলা হবে ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা হারিকেনের গতি সম্পন্ন তীব্র ঘূর্ণিঝড়, বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ তখন হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২ মে দুপুর নাগাদ ফণী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, তখন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটারে উঠতে পারে।         

ফণীর মতিগতি বিশ্লেষণ করে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে সম্ভাব্য গতিপথ বের করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বুধবার পর্যন্ত এ ঝড় অন্ধ্র উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হয়ে তারপর উত্তর দিকে বাঁক নিতে পারে।

উত্তাপ আর জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে পাক খেতে খেতে ৩ মে, অর্থাৎ শুক্রবার পুরির কাছ দিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে ফণী। উপকূলে পৌঁছানোর পর ধীরে আসতে পারে ঝড়ের শক্তি।