লাবণ্যের মৃত্যু: দুই চালকই রিমান্ডে

ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্যের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উবার মোটোর চালক ও কাভার্ডভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2019, 03:55 PM
Updated : 28 April 2019, 03:55 PM

ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ রোববার শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুর রহমানকে চার দিন এবং উবারের মটরসাইকেল চালক মো. সুমন হোসেনকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পুলিশ কর্মকর্তা এস আই মো. ইউসুফ জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্যের।

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবার মোটোর একটি মোটরসাইকেলে করে শ্যামলীর বাসা থেকে মহাখালীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন তিনি।জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে একটি কাভার্ড ভ্যান ওই মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়।

তাতে লাবণ্য মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান এবং কভার্ড ভ্যানটি তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই মামলার তদন্তে গিয়ে শনিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে  কাভার্ডভ্যানসহ চালক আনিসুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আনিসুরের বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আশিনপাড়ায়। তার আগে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাসা থেকে উবারের চালক সুমনকে আটক করে করা হয়।

দুপুরে এই দুজনকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মো. নুরুল ইসলাম।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, লাবণ্যের অকাল মৃত্যুতে তার সহপাঠীসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনসহ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ বিস্মিত ও শোকাহত। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। আনিসুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রদান করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

মটরসাইকেল চালক সুমনের পক্ষে তার আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন চান। শুনানিতে তিনি বলেন, ঘটনাটি উন্মুক্ত হাইওয়েতে ঘটেছে। কাভার্ডভ্যানটি ধাক্কা দিলে তারা পড়ে যায়। দুজনই আহত হয়। ভিকটিম মারা যায় আর সুমন আহত হয়। তখন বিচারক জানতে চান, সুমন হাসপাতাল থেকে চলে গেলেন কেন?

উত্তরে ওই আইনজীবী বলেন, ভিকটিম মারা গেছে, সুমন অসুস্থ ছিল। ব্যক্তিগত আতঙ্ক থেকে সে চলে যায়। সেদিন গাড়িটি সুমনের ওপর দিয়ে চলে গেলে সেও মারা যেতে পারত। সুমনের বিরুদ্ধে বেপরোয়া, উল্টো লেনে গাড়ি চালিয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ নেই। এখানে রিমান্ডের কোনো কারণ নেই। নতুন কিছু উদ্ধারের নেই।

আনিসুর রহমানের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এ সময় বিচারক তার কাছে জানতে চান কিছু বলার আছে কি না? আনিসুর রহমান বলেন, তিনি সাভার থেকে গাড়ি নিয়ে আসছিলেন। সামনেৎ হঠাৎ করে একজন লোক যাচ্ছিল।সে কারণে এ ঘটনা ঘটে।

তখন বিচারক বলেন, থামলেন না কেন? আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের খবর দেননি কেন?

এর উত্তরে কিছু বলেননি কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুর।

রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা ইউসুফ আলী খান জামিনের বিরোধিতা করেন।

তিনি বলেন, “এটি হত্যা না আত্মহত্যা চিহ্নিত করা যায়নি। এমতাবস্থায় আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।”

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দেন।