জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2019, 10:14 AM
Updated : 26 April 2019, 01:47 PM

ব্রুনেই সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসে শুরুতেই শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন তিনি।

বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এই নৃশংস হামলার নিন্দা জানিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে শোকবার্তা পাঠাই। এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

২০১৬ সালে জুলাইয়ে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “সেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছি। কিন্তু তারপরেও সন্দেহ অবশ্যই আছে। সবসময় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিচ্ছি বলেই হয়তো এখানে খুব একটা সুযোগ পাচ্ছে না।”

সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে গত রোববার ব্রুনেই যান শেখ হাসিনা। সেদিন ছিল খ্রিস্টানদের পবিত্র দিন ইস্টার সানডে।

সেই সকালেই শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা আর চারটি পাঁচতারা হোটেলে একযোগে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হয় ২৫৩ জন, যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার স্বামী মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন বেড়াতে। জায়ানের বাবা প্রিন্সও গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই জায়ানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শ্রীলঙ্কা হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

বাংলাদেশে ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ লেগেই আছে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যার যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যা, সামরিক অভ্যুত্থান, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথাও তিনি তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে অনবরত এ ধরনের সন্ত্রাস হচ্ছে এবং আমরা তার শিকার। সন্ত্রাসের ঝুঁকিতো আছেই। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আমরা যথেষ্ঠ সজাগ আছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে।”

জঙ্গি ও ন্ক্রাসবাদ ঠেকাতে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি জানি এটা শুধু গোয়েন্দা সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। সবাইকে নিয়ে করতে হবে। এজন্যই আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছি যে, একটা জনমত সৃষ্টি করা।”

শ্রীলঙ্কায় যারা হামলা চালিয়েছে তারাও শিক্ষিত ও স্বচ্ছ্বল পরিবার থেকে আসা- এ খবরের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “জানি না আত্মঘাতী আক্রমণ করে তারা কি পাচ্ছে!”

নিউ জিল্যান্ডে মসজিদে হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “মানুষকে হত্যা করে সেই ছবি ফেইসবুকে দিচ্ছে। কত বীভৎস ঘটনা।… আমি সবসময়ই বলে আসছি। জঙ্গিবাদে যারা জড়িত তাদের কোনো ধর্ম নাই, দেশও নাই, তাদের কিছু নাই।”

নুসরাত প্রসঙ্গ

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকেও ‘অগ্নি সন্ত্রাসের’ শিকার হতে হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এটুকু বলব, কেউ অন্যায় করলে সে যেই হোক না কেন, যে দলেরই হোক, তার কোনো ক্ষমা নেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”

মাদ্রাসা অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মেয়েটি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নুসরাতের বিষয়টা যদি তাৎক্ষণিকভাবে না ধরতাম, তাহলে সব দোষ নুসরাতের ওপরই পড়ত। তাকে চরিত্রহীন বানিয়ে ছেড়ে দিত। সে কারণেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এ ধরনের অন্যায় কখনো মেনে নেওয়া যায় না।”

নিপীড়কদের হুঁশিয়ার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “এ ধরনের ঘটনা যারাই ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব- সে যেই হোক। কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আমার দল, কার দল কোনোটা আমি দেখতে চাই না।”