কেরানি বানানোর এই শিক্ষা ব্যবস্থা সাগরে ফেলা দরকার: মোস্তাফা জব্বার

দেশের চলতি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরতে গিয়ে ‘কেরানি বানানোর’ এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাগরে ফেলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 05:31 PM
Updated : 25 April 2019, 05:43 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) আয়োজিত শিক্ষক সম্মেলনের সমাপনী পর্বে একথা বলেন তিনি।

‘শিক্ষিত বেকার’ দেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে যে, আমরা পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ। আমাদের শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে।

“এটা প্রায়ই আমি বলে থাকি আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা, এই শিক্ষাব্যবস্থাটা একদম ধইরা নিয়া বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ এটা প্রথম শিল্পযুগের শিক্ষাব্যবস্থা। প্রথম শিল্পযুগের কী প্রয়োজন ছিল? কেরানি বানানোর দরকার ছিল।”  

উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা নিজেরা যদি একটু চোখ বুঁজে চিন্তা করে দেখেন, যাদের লেখাপড়া শেখান তাদের টার্গেট একটাই- কেরানি হওয়াটাই টার্গেট। এবং সেই কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম সমস্যার নাম কর্মসংস্থান।”

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে তোলার পরামর্শ দিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “শিক্ষাব্যবস্থা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিলেও মানুষগুলোকে তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। ওরা তো আমাদেরই সন্তান, আমি জন্ম দিয়েছি সুতরাং আমার যে চ্যালেঞ্জটি রয়ে গেছে সেই চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে যে, মানুষগুলো আমার রয়েছে, যে মানুষগুলো ভবিষ্যতের পৃথিবীতে বাংলাদেশে বাস করবে, সেই মানুষগুলোর জন্য আমি ডিজিটাল যুগের দক্ষতা দিতে পারব কি না।

“একটি সহজ উপায় হচ্ছে, আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে শিক্ষাটা প্রচলিত করে রেখেছি, সেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাকে যদি আমরা ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে দিতে পারি তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো যেগুলোতে আপনারা প্রতিনিধিত্ব করেন সেইখান থেকে যখন বেরিয়ে আসবে তাকে আমি আমার শিল্পযুগের মানুষ হিসেবে পেয়ে যাব।”

শিক্ষায় অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ নিয়ে সকালে শিক্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু সত্তর সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছেন, অন্ততপক্ষে জিডিপির শতকরা ৪ ভাগ আমাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু আমরা এখনও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় ৫০ বছর পরেও জিডিপির ২ শতাংশের কাছাকাছি।”

শিক্ষায় এগিয়ে গেলে দেশ উন্নতিতেও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন দীপু মনি।

আর তাই বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “আমরা সবাই জানি যে, আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সারা দেশেই এখন মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে। সেগুলোর একটা বড় প্রয়োজন আছে আমাদের কিন্তু একই সাথে আমাদের শিক্ষাও। কারণ এখন আর ২০৪১ সাল থেকে আমরা খুব বেশি দূরে নেই। মাত্র ২১-২২ বছর দূরে।

“সেই সময়টাকে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগিয়ে যদি আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়, আমাদের বাজেটে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। …আমার শিক্ষা কোথায় যেতে হবে, তার জন্য আমার কী কী করতে হবে, সেই করার জন্য আমার কত টাকা দরকার সেই হিসেবে বরাদ্দটি হতে হবে।”

শিক্ষাক্ষেত্রে সৃজনশীলতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমরা পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনেছি, কিন্তু সেই পরিবর্তন আরও কীভাবে ভালো করা যায় সেই চেষ্টাই আমরা করছি।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি যেগুলো আছে সেখানে আমাদের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, শিক্ষক যারা আছেন, শিক্ষকদের চাইতেও বেশি সেখানে কর্তৃত্ব ফলানোর জন্য আমরা যাদেরকে নিয়োগ দেই তাদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে না।

“কিন্তু আমরা শুধুমাত্র নিজের কর্তৃত্ব বজায় থাকার জন্য শিক্ষিত নন এমন ব্যক্তিদের সেই ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নিয়োগ দেই। এটা আমাদের আসলে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা।”

যোগ্যতা নিশ্চিত করে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন নওফেল।

তিনি বলেন, “আমাদের আদর্শিক জায়গা থেকে জনগণের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের উচিত শিক্ষাগত যোগ্যতা নিশ্চিত করেই এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদেরই স্কুল ব্যবস্থাপনার সাথে সংযুক্ত করা।”

‘আমার গ্রাম-আমার শহর-আমার শিক্ষা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ, এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী অংশ নেন।  

‘ভবিষ্যৎ শিক্ষা-ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি’ শীর্ষক আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম, এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।