বাংলাদেশেও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 08:20 AM
Updated : 28 April 2019, 05:27 AM

বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

ভিডিও কনফারেন্সের অপর প্রান্তে রাজশাহীতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে গত রোববার ইস্টার সানডের দিনে শ্রীলঙ্কার রাজধানীর কয়েকচি চার্ট ও হোটেলে একযোগে বোমা হামলার প্রসঙ্গ তোলেন।

ওই হামলায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে শেখ হাসিনার ‍ফুপাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সী নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে। আহত হয়েছেন জায়ানের বাবা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। মাত্র কয়েকদিন আগেই শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটল সেখানেও আমরা বাংলাদেশের কয়েকজনকে হারিয়েছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য অনেকগুলো শিশু সেখানে মারা যায়। সেখানে আমাদেরও বাংলাদেশের শিশু জায়ানকে আমাদের হারাতে হয়েছে এই জঙ্গি সন্ত্রাসের কারণে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে।

“বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর অনেক চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে যাচ্ছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, এই ধরনের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে, কে কোথায় এই ধরনের সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে সাথে লিপ্ত সেটা শুধু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা না, দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।”

আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রেলের নতুন নতুন বগি কিনেছি সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাস কিনেছি, সেগুলো পুড়িয়েছে। তাছাড়া প্রাইভেট গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ এমন কিছু নেই যা অগ্নি সন্ত্রাসের কবলে ধ্বংস হয়নি।

“সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবন। ছোট শিশু, নারী, পুরুষ। বাবা দেখেছে চোখের সামনে ছেলে পুড়ে যাচ্ছে, স্ত্রী দেখেছে চোখের সামনে স্বামী পুড়ে যাচ্ছে, মা দেখেছে সন্তান বা কন্যা পুড়ে যাচ্ছে- এই রকম ভয়াবহ চিত্র আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। আমরা চাই না এ জাতীয় ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক।”

ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানান।

এছাড়াও অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সব ধর্মের শিক্ষা গুরুদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

রেলের উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক চালু করতে চাই। রাজধানীর সাথে যোগাযোগটা আরও উন্নত করে দিতে চাই।”

রেলের পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ঢাকা-রাজশাহী রুটে নিয়মিত চলাচল করবে।

বনলতা এক্সপ্রেসের বগি নতুন হলেও ইঞ্জিন পুরাতন। ২০১৩ সালে ভারত থেকে আমদানি করা ইঞ্জিন দিয়ে চলাচল করবে ট্রেনটি। ঘণ্টায় ট্রেনটির সর্ব্বোচ্চ গতি থাকবে ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার।

পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বনলতা এক্সপ্রেসে থাকছে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ১২টি নতুন বগি। এর মধ্যে শোভন চেয়ারের বগি ৭টি, যার আসন সংখ্যা ৬৬৪। এসি বগি ২টি, যার আসন সংখ্যা ১৬০। ১৬ আসনের একটি পাওয়ার কার। দুটি গার্ড বেরাকের আসন সংখ্যা ১০৮। সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা ৯৪৮।

এছাড়া একটি খাবারের বগিও থাকছে। ট্রেনটিতে রয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। থাকছে রিক্লেনার চেয়ার, ওয়াইফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে, যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শন করা হবে।

রাজশাহী থেকে ঢাকায় পৌঁছতে ট্রেনটির সময় লাগবে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। সপ্তাহের শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টায় ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। আবার দুপুর দেড়টায় ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

বনলতা এক্সপ্রেস উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ইনস্টিটিউট ও স্থাপনার উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।