আবরারের মৃত্যু: বাস মালিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

ঢাকার প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় বাস মালিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 05:30 AM
Updated : 24 June 2019, 10:39 AM

একই দিনে ওই বাসেরই চাপায় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ছয়জনের বিরুদ্ধে।

আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই শেখ রকিবুর রহমান জানান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বুধবার ওই দুই মামলার অভিযোগপত্র ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেয়।

গত ১৯ মার্চ সকালে প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেইটে সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের চাপায় প্রাণ হারান আবরার। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভে দুই দিন রাজধানীর রাজপথ কার্যত অচল থাকে।

পরে জানা যায়, আবরারকে চাপা দেওয়ার আগে বাসটি রাজধানীর শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকার কলেজছাত্রী সিনথিয়াকে চাপা দেয়।

আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের অভিযোগপত্রে সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের কনডাক্টর ইয়াছিন, বাসের মালিক গোপাল সরকার, সুপ্রভাত পরিবহন রুটের সভাপতি আলাউদ্দিন ও রুটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।

আর বাসের চাপায় সিনথিয়ার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে বাস চালক সিরাজুল ইসলাম, চালকের সহকারী ইব্রাহীম, কনডাক্টর ইয়াছিন, বাসের মালিক গোপাল সরকার, সুপ্রভাত পরিবহন রুটের সভাপতি আলাউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দিনকে।

মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী অভিযোগপত্র দুটিতে ‘দেখিলাম’ লিখে স্বাক্ষর করে দেন বলে এসআই শেখ রকিবুর রহমান জানান।

আবরারের মৃত্যুর মামলার অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০৪সহ সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এই ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহম্মেদ চৌধুরী বাস মালিক, চালক, কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারীকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।

সুপ্রভাত পরিবহনের সেই বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম, কন্ডাকটর ইয়াছিন ও চালকের সহকারী ইব্রাহীম

সু-প্রভাত পরিবহনের বাসমালিক গোপাল

বাসটির চালক সিরাজুল ইসলামকে (২৪) ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৭ মার্চ কন্ডাকটর ইয়াছিন ও হেলপার ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানায় পুলিশ। বাস মালিক গোপালকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ এপ্রিল।

মূলত ইয়াছিন ও ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করার পরই পুরো ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। ২৭ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেন, সুপ্রভাতের ওই বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম ১৯ মার্চ ভোর পৌনে ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা হন। সহকারী ইব্রাহীম ও কন্ডাকটর ইয়াছিনও সে সময় বাসে ছিলেন।

শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় ওই বাসের চাপায় গুরুতর আহত হন কলেজ ছাত্রী সিনথিয়া। বাসের যাত্রীরা তখন চালক সিরাজুলকে ধরে পুলিশে দেয়।

পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, “বাসটি তখন রাস্তার পাশে দাঁড় করানো ছিল। উত্তেজিত জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় মালিক গোপালকে ফোন করে ইয়াছিন। মালিক তখন ইয়াছিনকে দ্রুত বাসটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে বলেন।”

বাসটি ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় চালকের আসনে ছিলেন কন্ডাকটর ইয়াছিন। নদ্দায় প্রগতি সরণিতে বসুন্ধরা গেইটে বাসটি আবরারকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আর ইয়াছিন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বাস থেকে পালিয়ে যান।

দুর্ঘটনার পর সেদিনই সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের রুট পারমিট বাতিল করে বিআরটিএ। পরে ঢাকা মহানগরীতে সুপ্রভাতের সব বাস ও মিনিবাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ওই বাসের মূল চালক সিরাজুল হালকা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নিয়েই নিয়ম ভেঙে বাসের মতো ভারী বাহন চালাচ্ছিলেন।