রিভিউ খারিজ: মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধই থাকল

রাজধানীর অদূরে সাভারের আমিনবাজারে মধুমতি মডেল টাউনের আবাসিক প্রকল্প অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 04:32 AM
Updated : 25 April 2019, 10:38 AM

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চের এই সিদ্ধান্তের ফলে আমিনবাজারে মধুমতি মডেল টাউনের ওই প্রকল্পের বৈধতা পাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকছে না।

আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী, ওই প্রকল্পের ক্রেতাদের প্লটের দামের দ্বিগুণ অর্থ এখন ফেরত দিতে হবে প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকার্সকে।

পাশাপাশি বিলামালিয়া ও বেইলারপুর মৌজার যে জলাভূমি ভরাট করে মধুমতি মডেল টাউন গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল, সেই জলাভূমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে ছয় মাসের মধ্যে। 

আমিন বাজারের অদূরে বন্যার পানি প্রবাহ এলাকা ভরাট করে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প বাস্তবায়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালের ১৪ অগাস্ট হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা। প্রকল্পটি রাজউকের অনুমোদিত নয় বলেও সেখানে জানানো হয়।

ওই রিটের শুনানি করে ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই হাই কোর্ট প্রকল্পটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে ২০১২ সালের ৭ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও সেই রায় বহাল থাকে।

এর পর দুই বছরে মেট্রো মেকার্স ও জমির মালিকদের পক্ষ থেকে মোট পাঁচটি রিভিউ আবেদন করা হয় সর্বোচ্চ আদালতে। সেসব আবেদনের ওপর শুনানি করে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিল।

পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, ফজলে নূর তাপস, আব্দুস সাত্তার ও নিখিল সাহা।

অন্যদিকে বেলার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহম কবির।

রায়ের পর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের এ রায়ের ফলে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প চূড়ান্তভাবে অবৈধ হয়ে গেল। অনিয়ন্ত্রিত আবাসন শিল্পকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ভূমিদস্যুতা রোধে সর্বোচ্চ আদালতের এই চূড়ান্ত রায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এ রায় জলাশয় ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম শাস্তি।”

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আপিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মেট্রো মেকার্সের দুটি এবং প্রায় আড়াই হাজার প্লট মালিকদের সংগঠন ‘মধুমতি মডেল টাউন প্লট ওনার্স ফাউন্ডেশন’ পক্ষে আরও একটি আবেদন করা হয়েছিল।

এছাড়া প্লট মালিক আনসার উদ্দিনসহ আরও ৫৫ জন প্লট মালিকের পক্ষে এবং আব্দুস সাত্তারসহ ১৮ জন প্লট মালিকের পক্ষে আরও দুটি রিভিউ আবেদন করা হয়।

সর্বোচ্চ আদালত এর সবগুলো খারিজ করে দিয়ে আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকল।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিলামালিয়া ও বেইলারপুর মৌজায় মধুমতি মডেল টাউন এলাকার জলাভূমি ছয় মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ওই প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকার্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

মেট্রো মেকার্স তা না করলে রাজউককে এই দায়িত্ব নিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেক্ষেত্রেও মেট্রো মেকার্সকেই খরচ মেটাতে হবে।

রায়ে বলা হয়, “ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন খরচসহ ক্রেতাদের প্রদেয় টাকার দ্বিগুন পরিশোধ করতে মেট্রো মেকার্সকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।”