কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে জানান: প্রধানমন্ত্রী

দেশে জঙ্গি দমনে সফলতা এলেও প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসীর হামলার প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলায় নিজের স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বুধবার সংসদে বক্তৃতায় এই পরামর্শ দিয়ে দেশের কোথাও কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখলে তার সরকারকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশে এ ধরনের বোমা হামলা, জঙ্গি হামলা আমরা কঠোর হস্তে দমন করেছি। আমি দেশবাসীকে বলব, সতর্ক থেকে কোথাও যদি অস্বাভাবিক কিছু পায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়।”

তিন বছর আগে গুলশান হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশে তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নামে সাঁড়াশি অভিযানে; তাতে গ্রেপ্তার কিংবা মারা পড়েন শীর্ষ জঙ্গিনেতারা।

এরপর বাংলাদেশে জঙ্গিদের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি; ভবিষ্যতে জঙ্গিদের মাথাচাড়া দেওয়া ঠেকাতে তারা সতর্ক বলেও জানিয়েছেন তারা।

রোববার ইস্টার সানডের দিনে শ্রীলঙ্কার কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে একযোগে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়, তাতে নিহত তিন শতাধিকের মধ্যে শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই, সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতিও রয়েছেন।

বিকালে নাতিকে শেষ দেখা দেখে শোকার্ত স্বজনদের সান্ত্বনা জানিয়ে এসে সন্ধ্যার পর সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী; একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুর দিন প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি কথা বলেন সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে।

শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহতের শেষকৃত্য- ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই না, এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটুক। যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, তাদের কোনো ধর্ম নাই, তাদের কোনো দেশ-কাল-পাত্র নাই। জঙ্গি জঙ্গিই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই।

“আর ইসলাম ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করে, আমি বলব তারা আমাদের এই পবিত্র ধর্মটাকেই মানবজাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে দিচ্ছে।”

শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ এই হামলার পেছনে উগ্র ইসলামী গোষ্ঠীকে সন্দেহ করা হচ্ছে; মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে বার্তা দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “সব ধর্মেই কিন্তু শান্তির কথাই বলা আছে। তারপরেও কিছু লোক ধর্মীয় উন্মাদনায় তারা যে মানুষের প্রতি আঘাত হানে, মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, এটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক, কষ্টকর।”

শ্রীলঙ্কার হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা এ ধরনের ঘৃন্য ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তারা এ মধ্য দিয়ে কী অর্জন করে, জানি না।”

সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনাও তুলে ধরেন।

সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগে বনানীতে শেখ সেলিমের বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত স্বজনদের সান্ত্বনা জানানোর সময় আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শেখ হাসিনাও

নাতি জায়ানের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুরা কেন এভাবে জীবন দেবে?

জায়ান মা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া ও বাবা মশিউল হক প্রিন্সের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়; সঙ্গে তার ছোট ভাইটিও ছিল।

তারা যে হোটেলে ছিলেন, সেখানেও হামলা হয়। হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়ে নিহত হন জায়ান। জায়ানকে বুধবার বাংলাদেশে এনে সমাহিত করা হয়েছে, তার বাবা প্রিন্স আহত হয়ে শ্রীলঙ্কায় চিকিৎসাধীন।

সংসদের অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাবে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে জায়ান চৌধুরীকেও রাখা হয়।

সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর জায়ান চৌধুরীসহ সম্প্রতি নিহতদের জন্য মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্বজনের মৃত্যুতে ভারাক্রান্ত মনে শেখ হাসিনা বলেন, “জায়ান একটা ছোট বাচ্চা। মাত্র আট বছর বয়স। আজকে সে আমাদের মাঝে নেই। তার বাবাও মৃত্যুশয্যায়। বাবাকে এখনও জানতে দেওয়া হয়নি যে জায়ান নেই। সে বারবার খুঁজছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কখনও মানুষের কোনো কল্যাণ আনতে পারে না। আবার মনুষ্যসৃষ্ট সন্ত্রাসও আমি দেখি। নুসরাত, তার যারা সাথী, তারা কেরোসিন তেল ঢেলে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারল!

“একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এই ধরনের যে অমানবিক ঘটনাগুলো ঘটে। এটা সত্যিই, আমি বলবো মানব জাতির জন্যই অকল্যাণকর।”