বুধবার সন্ধ্যার আগে জায়ানকে দাফনের পরপরই তার ছোট্ট সমাধি ভরে ওঠে ফুলে ফুলে; জীবন দেখার আগেই জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া জায়ানকে স্মরণের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠও তোলেন অনেকে।
তার আগে বিকালে বনানী মাঠে জানাজার সময় জায়ানের নানা রাজনীতিক শেখ ফজলুল করিম শোকার্ত কণ্ঠে স্মরণ করেন নাতিকে।
“জায়ান সব সময় আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের মাতিয়ে রাখত,” বলার পরই তিনি প্রথা অনুযায়ী বলেন, “জায়ানের দ্বারা কেউ কোনো কষ্ট পেয়ে থাকলে তাকে মাফ করে দেবেন। ছোট ছেলে, কাউকে কষ্ট দেওয়ার মতো বুঝ তার হয়নি।”
ঢাকার উত্তরার সান-বীম স্কুলে দ্বিতীয় গ্রেডে পড়ত জায়ান, ছিল ক্রিকেট পাগল আর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ভক্ত।
মা-বাবার সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিল জায়ান, সঙ্গে ছোট ভাইটিও ছিল। গত রোববার ইস্টার সানডের দিন দেশটিতে গির্জা ও হোটেল মিলিয়ে আটটি স্থানে বোমা হামলা তিন শতাধিক মানুষের সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশি শিশুটিরও প্রাণ।
হামলার সময় হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন জায়ান ও তার বাবা মশিউল হক প্রিন্স। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে এখনও কলম্বোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
জায়ানের মা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার ছোট ছেলেটিকে নিয়ে হোটেল কক্ষে থাকায় বেঁচে যান এই হামলা থেকে।
জানাজার আগে আহত জামাতার জন্যও দোয়া চান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম।
“আপনারা সবাই দোয়া করবেন জামাই যেন সুস্থ হয়ে উঠে। আপনাদের সকলের সহমর্মিতায় আমরা শক্তি অর্জন করেছি। আপনারা দোয়া করবেন, আমার মেয়ে যেন এই ব্যথা সহ্য করতে পারে।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনিকেও সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেদিন মামার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ভাই-ভাবিকে একসঙ্গে হারিয়েছিলেন শেখ সেলিম; সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে রাজনীতিতে এই পরিবারটি, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানাজায় শেখ সেলিম বলেন, “১৫ আগস্টে যারা শহীদ হয়েছেন, তার মধ্যে শুধু বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গীপাড়ায় নেওয়া হয়। বাকি ১৮ জনকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সে ১৮ জনের সঙ্গেই ১৯তম শহীদ হিসেবে জায়ানকে দাফন করা হবে।”
প্রিয় নাতি জায়ানকে শেষ বার দেখতে শেখ সেলিমের বনানীর বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুর পৌনে ১টায় শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে জায়ানের মরদেহ আসার পর সরাসরি নেওয়া হয়েছিল নানার বাড়িতে। আড়াইটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী।
ফুপাত ভাই শেখ সেলিমের বাড়িতে শেখ হাসিনা ঢোকার পর তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়-স্বজনরা। প্রধানমন্ত্রী নিহত জায়ানের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন, সান্ত্বনা দেন শোকার্ত স্বজনদের।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ তন্ময়, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ। শেখ হাসিনার মেয়ের শ্বশুর খোন্দকার মোশাররফ হোসেনও ছিলেন উপস্থিত।
বিকাল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পর জায়ানের লাশ নেওয়া হয় বনানী মাঠে। আসরের নামাজের পর সেখানে জানাজা হয়, যাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী অংশ নেন জানাজায়।
জানাজার পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বনানী কবরস্থানে হয় জায়ানের দাফন।