সংবাদকর্মীদের সুরক্ষায় নতুন দুটি আইন শিগগিরই: তথ্যমন্ত্রী

গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষায় দুটি নতুন আইন করতে সংসদে বিল তোলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 12:10 PM
Updated : 23 April 2019, 12:47 PM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’ এবং ‘সম্প্রচার আইন’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার প্রক্রিয়া চলছে।

বৈঠকে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা টেলিভিশন সাংবাদিকদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো তথ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’ পাস হলে সাংবাদিকদের চাকরির নিশ্চয়তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন দুটির খসড়া বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ২৪ এপ্রিল থেকে সংসদের যে অধিবেশন বসবে, সেখানে এ দুটি বিল পাঠানো সম্ভব হবে না। তবে পরবর্তী অধিবেশনে যাতে তোলা যায়, সেই চেষ্টা সরকার করছে।

“আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি যাতে দ্রুত আমাদের কাছে আসার পর সেগুলো মন্ত্রিসভা হয়ে সংসদে উপস্থাপন করতে পারি।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এ দুটি আইন যখন কার্যকর হবে, যখন আইনে রূপান্তরিত হবে, আমি মনে করি আজকে যে সমস্যাগুলোর কথা আপনারা বলছেন তখন সেগুলোর আইনি প্রটেকশন আমরা দিতে পারব, এটি অত্যন্ত জরুরি।”

চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের জন্য আপৎকালীন ভাতা দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে এই ট্রাস্ট ফান্ড থেকে সাহায্য করা যায়, অন্য কোনো কারণে সাহায্য করা যায় না।

“ইতোমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি, ট্রাস্টের নিয়ম পরিবর্তন করার জন্য, যাতে সাংবাদিকরা সাহায্য পেতে পারেন।”

বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে ‘হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেশের বাইরে চলে যাওয়ায়’ বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে অর্থ সংকট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

“এই অর্থ সংকটের কারণে সাংবাদিক ভাই-বোনদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বার্তা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, এগুলোর কোনোটাই হত না যদি বিদেশে বিজ্ঞাপন চলে না যেত।

“আর একটা সমস্যা নিউ মিডিয়া- ইউটিউব, ফেইসবুক, নেটফ্লিক্স, গুগলে আমাদের দেশের অনেক বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে, যেগুলো থেকে আমরা কোনো ট্যাক্স পাচ্ছি না। এ বিষয়ে আমি আলোচনা করেছি, এগুলো শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য আমরা উদ্যোগ নেব।”

বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে আইনের কড়াকড়ি আরোপ করা হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি সব সিটি করপোরেশন এলাকায় কেবল টিভির ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকের শুরুতে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের সম্পাদক একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ বলেন, “টিভি সাংবাদিকরা চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, বেতন হচ্ছে না, সময়মত ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে না, তারা সংকটে আছেন। সাংবাদিকদের সম্মান, অবস্থান এবং সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।”

দেশে ভিন্ন সংস্কৃতি অবাধে প্রবেশ করছে মন্তব্য করে শাকিল বলেন, “বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন ছাড়া সম্প্রচার করার কথা থাকলেও আইন লঙ্ঘন করে সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করা যায় সেই প্রযুক্তি আনতে হবে, প্রয়োজনে তারা যেন ক্লিন ফিড সরবরাহ করে।”

বিদেশি চ্যানেলে যেন বিজ্ঞাপন প্রচার না হয় তা নিশ্চিত করতে একটি মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানান শাকিল।

টেলিভিশনের সাংবাদিকরা ওয়েজবোর্ডের আওতায় না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে গাজী টিভির সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “টিভি সাংবাদিকরা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পড়েছি। প্রতিদিন চাকরির ঝুঁকি নিয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে।”

সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, টেলিভিশন কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করা হলেই অপারেটর, সরকার ও টিভি চ্যানেলের আয় বাড়বে। পে-চ্যানেলে রূপান্তরের বিষয়েও টিভি চ্যানেলের মালিকরা কাজ করবেন।

বাংলাদেশি চ্যানেল বিদেশে যে শর্তে সম্প্রচার করা হয় সেই একই শর্তে যেন বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচারিত হয়- সেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান রাজা।

ইউটিউব, ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে জানিয়ে সভায় সম্প্রচার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনেকে বার্তাকক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে, আরও বার্তাকক্ষ বন্ধ হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

হঠাৎ করে বর্তাকক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হলে তাতে টেলিভিশন লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হয় কি না- সে বিষয়টি দেখার জন্য তথ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তারা।

সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঢাকায় ‘এশিয়ান মিডিয়া সামিট’ করার পরিকল্পনার কথা জানালে তথ্যমন্ত্রী ওই সব ধরনের সহাযোগিতার আশ্বাস দেন।

সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই সামিটে নিজেদের সমস্যার পাশাপাশি অর্জনগুলো তুলে ধরা হবে। অন্যান্য দেশ বিভিন্ন সমস্যা যেভাবে সমাধান করেছে তাদের কাছ থেকে সেই গল্প শোনা হবে।