শ্রীলঙ্কার হামলা বাংলাদেশের জন্য কেন বিপদের, দেখালেন মনিরুল

শ্রীলঙ্কার হামলা যে বাংলাদেশের জন্য কতটা বিপদের, তা তুলে ধরলেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স নাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 11:58 AM
Updated : 23 April 2019, 02:36 PM

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গিরা প্রতিবেশী দেশটির হামলা থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতে পারে।

ইস্টার সানডের দিন রোববার শ্রীলঙ্কায় একযোগে হামলা হয় তিনটি গির্জা এবং কয়েকটি হোটেলে। এতে ৩৫ বিদেশিসহ তিন শতাধিক মানুষ নিহত এবং চার শতাধিক আহত হয়।

হামলার জন্য একটি ইসলামী দলকে শ্রীলঙ্কা সরকার সন্দেহ করলেও তাদের পেছনে আন্তর্জাতিক কোনো গোষ্ঠী রয়েছে বলেও তাদের ধারণা। হামলার দুদিন পর আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে।

মঙ্গলবার আইএসের নামে বার্তার খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মনিরুল, যাতে শ্রীলঙ্কায় হামলার প্রসঙ্গটি আসে।

শঙ্কা প্রকাশ করার পাশাপাশি তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কেউ তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড যেন না ঘটাতে পারে, সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। আমরা, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা সবাই সতর্ক রয়েছি।”

বাংলাদেশে জঙ্গিদের এখন বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই বলে দাবি করেন জঙ্গিবিরোধী নানা অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশে জঙ্গিরা চোরাগোপ্তা বেশ কিছু হামলা চালানোর পর বড় হামলা চালিয়েছিল ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে। ওই হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করে তারা।

গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিদের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই ধরা পড়েন কিংবা মারা যান।

বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল, তাদের ফেরার সম্ভাবনার বিষয়ে মনিরুল বলেন, “বাংলাদেশ থেকে কতিপয় লোক অধিকাংশ আইএসে গেছে ২০১৪ সালের শেষ দিকে।
“এদের পাসপোর্টের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং তারা ফিরতে হলে দূতাবাসে গিয়ে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যাচাই-বাছাই করেই ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে।”

এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সিরিয়া থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আসা যায় না। অন্য দেশের গিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই মারা পড়েছেন কিংবা গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে মনে করেন মনিরুল।

“বাংলাদেশ থেকে যারা গেছে যেমন ডাক্তার রোকন, সে সম্ভবত বেঁচে আছে। যারা গেছে, তারা ক্যাপচার, ডিটেইনড অথবা ডেথ। ওইসব এলাকায় বাংলাদেশের কারও আত্মগোপন করে থাকা সম্ভব নয়, কারণ সিরিয়া বা আশপাশে আইএসের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই।”

এরপরও কেউ বাংলাদেশে ফেরত আসতে চাইলে বিমানবন্দরেই ধরা পড়বেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মনিরুল বলেন, শ্রীলঙ্কার পাশের দেশ মালদ্বীপ থেকে বড় একটি সংখ্যায় আইএসে যোগ দিয়েছিল।

“মালদ্বীপ থেকে বেশ কিছু সংখ্যক, জনসংখ্যা অনুপাতে ভালো সংখ্যা আইএসে যোগ দিয়েছে। আবার শ্রীলঙ্কা থেকেও কেউ কেউ গেছে, এরকম আমরা শুনেছি। অসমর্থিত সূত্র বলছে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াতেরও ভালো সংখ্যা আইএসের....।”

শ্রীলঙ্কার হামলা কারা চালিয়েছে বলে মনে করেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মনিরুল বলেন, শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত হামলা চালালেও এর পেছনে আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠন যুক্ত বলে তার মনে হচ্ছে।

“হামলার ধরন, টার্গেট করার ধরন, ছবি আমরা দেখেছি এবং আমাদের কাছে কিছু তথ্যও ছিল। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটি আসলে ..... এমনটি হতে পারে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াতের একটি অংশ, যারা হয়তবা আইএসের প্রতি ….কারণ হামলার ধরন ও লক্ষণ, এত বড় সিনক্রোনাইজড হামলা।”

শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধ চলায় এই ধরনের হামলা চালানোর উপাদান সেখানে থাকলেও বাইরের শক্তির ইন্ধন থাকার কথা মনে করেন বাংলাদেশ পুলিশের এই কর্মকর্তা।

“আমরা মনে করি টেরোরিস্টদের ভেতরে তো একটা যোগাযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে যোগাযোগটা হয়তবা হয়েছে।”