জাহালমকাণ্ড: হাই কোর্টে রুল শুনানিসহ সব কার্যক্রম স্থগিত

আসামি না হয়েও দুদকের মামলায় জাহালমের তিন বছর জেল খাটা প্রশ্নে হাই কোর্টের জারি করা রুলের শুনানিসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 10:55 AM
Updated : 13 May 2019, 07:51 AM

দুদক সংক্রান্ত মামলা শুনানির ক্ষেত্রে বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দুদকের করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চেম্বার আদালত জাহালমের ঘটনায় হাই কোর্টের জারি করা রুলসহ এ মামলার সমন্ত কার্যক্রম ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছে। ওই দিন আপিল বিভাগের পূর্ণায্গ বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

“দুদক সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্টে স্পেশাল বেঞ্চ আছে। এ দুদকের মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ বেঞ্চ নির্ধারণ করা আছে। নির্ধারিত এসব বেঞ্চের বাইরে নিয়মিত অন্য কোনো বেঞ্চ এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের একটি রায়ও আছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই চেম্বার আদালত আদেশ দিয়েছে।”

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।

এরপর ২৮ জানুয়ারি হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করে।

কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক।

তবে হাই কোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।

কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস)সহ যাবতীয় নথি তলব করে হাই কোর্ট।

দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলে, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই।

জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের এই বেঞ্চ। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।

কিন্তু দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলে আদালত।

পাশাপাশি আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট।

ওইদিনই আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাই কোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে।

এরপর দুদক গত ২১ এপ্রিল হাই কোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়। ওই আবেদনের শুনানি করেই মঙ্গলবার স্থগিতাদেশ দিলেন চেম্বার বিচারপতি।

আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “আদালতে আমরা দেখিয়েছি যে, দুদকের মামলা শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ দেওয়া আছে। বিশেষ বেঞ্চকেই এসব মামলা শুনতে হবে। আমরা আমাদের আবেদনের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় দেখিয়েছি।”

জাহালম প্রসঙ্গে যে আদেশগুলো হাই কোর্টের ওই বেঞ্চ থেকে এসেছে, সেগুলোর ফলাফল কী হবে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী বলেন, “১৩ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হলে সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। আজকে আমরা স্থগিত চেয়েছিলাম, চেম্বার আদালত স্থগিত করেছেন।”

আরও খবর