অন্যের বানানো শরবত খাবেন না ওয়াসার এমডি

ঢাকা ওয়াসার পানি ‘শতভাগ বিশুদ্ধ’ বলে দাবি করলেও সেই পানি দিয়ে অন্যের বানানো শরবত খেতে আপত্তি আছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের।

ওবায়দুর মাসুমও তাবারুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 09:28 AM
Updated : 23 April 2019, 09:39 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “আমি তো কারো পানিতেই.. কারোই তো খাব না। আমি তো খাব আমার পানি। আমি কোনটা খাব না খাব; সেটা তো আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।” 

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়ে রাজধানীবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। পুরনো সরবরাহ লাইন দিয়ে যে পানি আসে তাতে ময়লা আর দুর্গন্ধ থাকার এবং সেই পানির কারণে অসুস্থতার খবর সংবাদমাধ্যমগুলোতে নিয়মিতই আসে।

কিন্তু তারপরও তাকসিম এ খান ওয়াসার পানিকে শতভাগ সুপেয় বলে দাবি করায় অভিনব এক প্রতিবাদের আয়োজন করেছেন জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান।

স্ত্রী শামিম হাশেম খুকি, তাদের শিশুকন্যা এবং পরিবারের বন্ধু মতিউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার তিনি হাজির হয়েছেন কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার কার্যালয়ে। জুরাইন থেকে কাচের জগে করে নিয়ে আসা ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে খাওয়াতে চান তারা।

মিজানুরের ওয়াসা ভবনে আসার পরিকল্পনার খবর আগের দিনই গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার তারা যখন কারওয়ান বাজারে এলেন, সাংবাদিকদের পাশাপাশি পুলিশও সেখানে উপস্থিত। শুধু নেই ওয়াসার এমডি।  

উপস্থিত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা মিজানুর ও তার সঙ্গীদের ওয়াসা ভবনে ঢুকতে বাধা দিয়ে জানালেন, এমডি সাহেব অফিসে নেই, তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

পুলিশের ওই বক্তব্য শুনে মিজানুর তার সঙ্গীদের নিয়ে ওয়াসা ভবনের সিঁড়িতে বসে পড়েন। তাদের সামনেই রাখা ছিল কাচের জগে ওয়াসার কলের পানি, লেবু আর চিনি।

 

বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর দুপুরের দিকে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলা সম্ভব হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- ওয়াসার পানি যেহেতু সুপেয়, মিজানুরের বানানো ওই শরবত তিনি খাবেন কি না।

তাকসিম এ খান উত্তরে বলেন, অন্য কারো হাতে বানানো শরবত তিনি খাবেন না। মিজানুরের নিয়ে আসা শরবত খাওয়ারও কোনো প্রশ্ন আসে না।

“তাদের পানিতে যদি ময়লার অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা পরিচালকের সাথে কথা বলতে পারে।”

মিজানুর শরবত দিয়ে ওয়াসা ভবনের সিঁড়িতে বসে আছেন। এখন সেখানে যাবেন কি না জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “যাব তো বটেই। আমার তো ৪টার সময় মিটিং আছে একটা।”

টিআইবি গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন।

আর বাসাবাড়িতে এই পানি ফোটাতে বছরে পোড়াতে হয় ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস, যার আর্থিক মূল্য ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এরপর গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন ওয়াসার এমডি তাকসিম। তিনি দাবি করেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি শতভাগ বিশুদ্ধ।

তবে শরবত নিয়ে ওয়াসার এমডির অপেক্ষায় থাকা মিজানুর সাংবাদিকদের বলেন, “জুরাইন এলাকায় ওয়াসার পাইপ ৪০ বছর আগের। এই পানি আমরা খাই না। খাওয়ার উপযোগী না। বাধ্য ও নিরুপায় হয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করি।”

কাচের জগে করে নিজের এলাকা আনা পানি দেখিয়ে তিনি বলেন, “এটা মাঝারি ধরনের। এর থেকে খারাপ পানিও পাই।”

একজন সমাজকর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া মিজানুর যে জগ আর গ্লাস সামনে তুলে ধরেছিলেন, তার পানিতে ময়লা ভাসতে দেখা যাচ্ছিল।

মিজানুর বলেন, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালে সাড়ে তিন হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ওয়াসার এমডিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

“কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই তিনি নেননি। আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন। এখন তিনি কীভাবে বললেন, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ! আমরা ক্ষুব্ধ। উনার পানি উনাকে খাওয়াতে এসেছি। শতভাগ সুপেয় পানির কথা অসত্য। এই কথার জন্য উনাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পদত্যাগ করতে হবে।”

মিজানুর বলেন, এমডিকে ওয়াসার পানির শরবত না খাওয়ানো পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন। আর সুপেয় পানি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ওয়াসার পানির বিল দেবেন না।

মিজানুরের মত বেশিরভাগ মানুষই ওয়াসার এমডির দাবির সঙ্গে একমত নন। তার ওই বক্তব্য নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত মতামত জরিপে পাঠকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- তারা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলে মনে করেন কি না।

উত্তরে ৯৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা তা মনে করেন না। আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এমডির বক্তব্যের তুমুল সমালোচনা চলছে।