‘শতভাগ বিশুদ্ধ’ ওয়াসার পানির শরবত নিয়ে এমডির দুয়ারে অপেক্ষা

ঢাকা ওয়াসার পানি ‘শতভাগ বিশুদ্ধ’ বলে দাবি করায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে ‘ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত’ খাওয়াতে জুরাইন থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছে একটি পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 07:37 AM
Updated : 23 April 2019, 08:55 AM

জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী শামিম হাশেম খুকি, তাদের শিশুকন্যা এবং তাদের পরিবারের বন্ধু মতিউর রহমান মঙ্গলবার সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সিঁড়িতে অবস্থান নিয়ে আছেন। তাদের সামনে রয়েছে কাচের জগে ওয়াসার কলের পানি, লেবু আর চিনি।

টিআইবি গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন।

আর বাসাবাড়িতে এই পানি ফোটাতে বছরে পোড়াতে হয় ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস, যার আর্থিক মূল্য ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এরপর গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন ওয়াসার এমডি তাকসিম। তিনি দাবি করেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি শতভাগ বিশুদ্ধ।

জুরাইন থেকে আসা মিজানুর আর তার পরিবার জগে ভরা পানি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে ওয়াসা ভবনে ঢুকতে চাইলে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। বলা হয়, এমডি সাহেব অফিসে নেই, তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

পুলিশের ওই বক্তব্য শুনে মিজানুর তার সঙ্গীদের নিয়ে ওয়াসা ভবনের সিঁড়িতে বসে পড়েন।

উপস্থিত সাংবাদিকদের মিজানুর বলেন, “জুরাইন এলাকায় ওয়াসার পাইপ ৪০ বছর আগের। এই পানি আমরা খাই না। খাওয়ার উপযোগী না। বাধ্য ও নিরুপায় হয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করি।”

কাচের জগে করে নিজের এলাকা আনা পানি দেখিয়ে তিনি বলেন, “এটা মাঝারি ধরনের। এর থেকে খারাপ পানিও পাই।”

একজন সমাজকর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া মিজানুর যে জগ আর গ্লাস সামনে তুলে ধরেছিলেন, তার পানিতে ময়লা ভাসতে দেখা যাচ্ছিল।

মিজানুর বলেন, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালে সাড়ে তিন হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ওয়াসার এমডিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

“কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই তিনি নেননি। আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন। এখন তিনি কীভাবে বললেন, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ! আমরা ক্ষুব্ধ। উনার পানি উনাকে খাওয়াতে এসেছি। শতভাগ সুপেয় পানির কথা অসত্য। এই কথার জন্য উনাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পদত্যাগ করতে হবে।”

মিজানুর বলেন, এমডিকে ওয়াসার পানির শরবত না খাওয়ানো পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন। আর সুপেয় পানি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ওয়াসার পানির বিল দেবেন না।