রূপায়নের দাবি, পুকুর আছে; কিন্তু গিয়ে দেখা গেল না

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যায় রাজধানীর রায়েরবাজারে নিজেদের প্রকল্প এলাকায় পটারি পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরত আনার দাবি করেছে রূপায়ন গ্রুপ; যদিও এরপরও ওই জমিতে গিয়ে পুকুরের চিহ্ন দেখা যায়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2019, 02:15 PM
Updated : 22 April 2019, 02:59 PM

গত ২০ এপ্রিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয় ‘পরিবেশ আইন না মেনে রূপায়নের পুকুর চুরি’ শীর্ষক প্রতিবেদন।

তাতে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা আমলে না নিয়েই রাজধানীর রায়েরবাজারের পটারি পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করে বহুতল ভবন ‘রূপায়ন প্যারাডাইস’ নির্মাণে হাত দিয়েছে তারা।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে রূপায়ন হাউজিং এস্টেটের বক্তব্য নিতে তাদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে দুদিন ধরে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এখানেই জমির ভেতরে পুকুর ভরাট করে রূপায়ন গ্রুপ

সংবাদ প্রকাশের পর রূপায়ন গ্রুপের হেড অফ মিডিয়া মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

রূপায়নের ব্যাখ্যা

“এ সংবাদে বেশ কিছু তথ্য বিভ্রাট রয়েছে। পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করে বহুতল ভবন রূপায়ণ প্যারাডাইস নির্মাণে হাত দিয়েছে বলে যে মন্তব্য করেছেন প্রতিবেদক, তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পটি- রূপায়ন গ্রীন প্যারাডাইস নামে রূপায়ণ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর একটি ল্যান্ড প্রজেক্ট। রূপায়ণ এখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে না। প্রকাশিত সংবাদে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বর্তমানে রূপায়ন গ্রুপ এ্যাডভাইজার হিসেবে কর্মরত আছেন। পরিবেশ আইন না মানার মন্তব্যটি সঠিক নয় বরং প্রায় দুই বছর পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং জলাধার সংরক্ষণ আইন এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে রূপায়ণ জরাজীর্ন পুকুরটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে।”

প্রতিবেদকের বক্তব্য

প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু ছিল পরিবেশ আইন ও জলাধার আইন ভঙ্গ করে পুকুর ভরাট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশের পরও তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে না আনা। সেখানে ভবন কেমন হচ্ছে, তা প্রতিবেদনের আলোচ্য বিষয় ছিল না। আর প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে সেখানে কোনো ভবন উঠে গেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরই ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ রূপায়ন গ্রুপকে যে চিঠি দিয়েছিল, সেখানে বলা হয় ‘২১৫ শেরেবাংলা রোড রায়েরবাজারে অবস্থিত পটারি পুকুর ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন (রূপায়ন প্যারাডাইজ) নির্মাণে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে’।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নথিপত্র উদ্ধৃত করেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে পুকুরটি ভরাট করেছে রূপায়ন গ্রুপ। আর রূপায়ন গ্রুপের ব্যাখ্যায়ও এই স্বীকারোক্তি মিলেছে যে পুকুর তারা ভরাট করেছিল।    

প্রতিবেদনের ব্যাখ্যায় রূপায়ন পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরত আনার দাবি করলেও এরপর সোমবার গিয়ে সেখানে পুকুরের কোনো নিশানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ওই জমিতে দুটি স্থানে এখন একটু নিচু জায়গায় সামান্য পানি দেখা গেলেও তাকে কোনোভাবেই পুকুর বলা যায় না।

স্থানীয়রা বলছেন, ভরাট করার আগে ওই জমির অর্ধেকজুড়ে এক সময় পুকুর ছিল।

জমির পেছনের অংশে নিচু একটি স্থান আগাছায় পরিপূর্ণ, যাকেও কোনোভাবেই পুকুর বলা চলে না

প্রকল্পটি রূপায়ণ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের বলে রূপায়ন গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নথিতে রূপায়ন এস্টেট লিমিটেডের কথাই বলা ছিল, যার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

রূপায়ন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও রূপায়ন হাউজিং এস্টেট, দুটোই রূপায়ন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

২০১৬ সালের ২৮ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর রূপায়ন গ্রুপকে যে চিঠি পাঠিয়েছিল, তা রূপায়ন এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পি জে উল্লাহর ঠিকানায় গিয়েছিল।

তাই এই বিষয়ে কথা বলতে পাটোয়ারি জহির (পি জে) উল্লাহর মোবাইল ফোনে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা ধরেননি।