কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার ধরার চেষ্টা করছি: প্রধানমন্ত্রী

যেসব দেশ খাদ্য আমদানি করে, বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য দিয়ে সেখানকার বাজার ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার ব্রুনেই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2019, 04:26 PM
Updated : 21 April 2019, 04:30 PM

ব্রুনেই সফররত প্রধানমন্ত্রী রোববার দ্য এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের বলরুমে প্রবাসীদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে রোববারই ব্রুনেই পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা।

তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগের পথ খুলবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানেই আমরা যাচ্ছি ব্যবসা-বাণিজ্যটা যেন বৃদ্ধি পায়, সেই চেষ্টাটা আমরা করছি।

“আজকে আমরা খাদ্য উপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেখানে আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। সেটা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিদেশে রপ্তানিকরণ।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এই অঞ্চলের বহু দেশ আছে খাদ্য তারা বাইরে থেকে আনে। আমরা ধীরে ধীরে সেই মার্কেটটা ধরার চেষ্টা করছি। যেন আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে আমরা পাঠাতে পারি। আমরা যদি ভালো করে করতে পারি, বিরাট মার্কেট পাব।”

ছবি: ইয়াসিন কবির জয়

প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনেই সফর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মো. কামরুল আহসান বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারীদের একটি ব্রুনেই।

“তারা আমাদের কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারে। তাদের চাহিদা মত খাবার প্রস্তুত করে এখান থেকে রপ্তানি করতে পারে।”

ব্রুনেই ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মাত্র ১০ লাখ ডলারের মতো। এটাকে আরও বাড়ানোর পথ তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সফরে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীও সফরে এসেছেন। সঙ্গে রয়েছেন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ সভাপতিসহ ব্যবসায়ীদের একটি বড় প্রতিনিধি দল।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনেই সফরে দুই দেশের মধ্যে কৃষি, শিল্প ও সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য সম্পদ, প্রাণিসম্পদ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বিষয়ে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান বলকিয়ার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানের চেরাদি লায়লা কেনচানায় রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবেন। সেখানে সুলতানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।

ছবি: ইয়াসিন কবির জয়

প্রবাসীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাদের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সমস্যা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা প্রবাসের অভিজ্ঞতা দেশে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যারা এখানে বড় বড় কাজগুলো করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে উন্নয়নে কাজে দেবে।”

দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে সারাদেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়ানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের নানা উন্নয়মূলক কাজের চিত্রও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

ব্রুনেইতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ, যুব এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ প্রমুখ।

দুপুরে পৌঁছানোর পর ব্রুনেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়, তাকে স্বাগত জানান দেশটির যুবরাজ হাজী আল মুহতাদি বিল্লাহ।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়, দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। ব্রুনেইয়ের রয়্যাল গার্ডের একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।

এরপর মোটর শোভাযাত্রা করে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় দ্য এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে। তিন দিনের এই সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করছেন।