নুসরাত হত্যাকাণ্ডে পুলিশের দায় দেখছে সংসদীয় কমিটি

পুলিশ প্রথম থেকে সচেষ্ট থাকলে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির প্রাণহানি ঘটত না বলে মত এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2019, 11:18 AM
Updated : 21 April 2019, 11:27 AM

রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটি বলছে, যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলে প্রাণহানি মোকাবেলা করা যায়।

এ ধরনের ঘটনায় যাতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো প্রশ্নের মুখে না পড়ে, সেদিকেও নজর রাখতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, পাঁচ দিন পর তার মৃত্যু ঘটে।

এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান ডিআইজি রুহুল আমিন সম্প্রতি বলেছিলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কোন্দলও প্রভাব রেখেছে।

এই প্রেক্ষাপটে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল।

সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফের ডটকমকে বলেন, বৈঠকে বিষয় উত্থাপন করেন কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান। এরপর কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুও কথা বলেন।

পীর ফজলুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটিতে আমি বলেছি, পুলিশ সতর্ক থাকলে অনেক ঘটনা ঘটার আগে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। নুসরাত যখন ওসির কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি যদি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করতেন এবং যে আচরণ করেছেন সেটা না করতেন; তাহলে হয়ত নুসরাতের এই ঘটনাটিই (মৃত্যু) ঘটত না।”

অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি নিয়েছিলেন সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

ওই জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে নুসরাতের সঙ্গে ওসির আচরণ নিয়ে যেমন সমালোচনা ওঠে; তেমনি ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাকে সোনাগাজী থানা থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে টিআইবির মানববন্ধন। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

পীর ফজলু বলেন, সবক্ষেত্রেই পুলিশ যাতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখে সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে সংসদীয় কমিটির সভায়, কমিটির সভাপতিও এতে একমত পোষণ করেছেন।

কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, “কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে যদি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবে প্রাণহানি আটকানো যেতে পারে।

“আর এসব ঘটনায় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।”

বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, হাবিবুর রহমান, সামছুল আলম দুদু, ফরিদুল হক খান, নূর মোহাম্মদ ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদও অংশ নেন।

আলোচিত এই মামলার তদন্তের অগ্রগতি সময়ে সময়ে জানতে চাইবেন বলে জানান সংসদীয় কমিটির সভাপতি টুকু।

এই তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যার মামলার তদন্তের উপর চোখ রাখার কথা বলেছে হাই কোর্টও।

নুসরাতের ভাইয়ের করা মামলার আট আসামির সবাইকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও আটজনকে। এদের মধ্যে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও রয়েছেন।