ভোটার হালনাগাদে রোহিঙ্গা ঠেকাতে এবারও ‘বিশেষ নজর’

ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেজন্য এবারও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৩২ উপজেলায় বিশেষ নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2019, 05:54 AM
Updated : 19 April 2019, 05:55 AM

মাঠ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে বলা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। 

আগামী ২৩ এপ্রিল ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার এক সমন্বয় সভা থেকে মাঠ কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে কক্সবাজার, বান্দারবান, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি রয়েছে।

“রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার হতে না পারে সেজন্য উদ্যোগ রয়েছে আমাদের। রয়েছে ভোটার নিবন্ধনে বিশেষ ফরম। এবারও আমরা নির্দেশ দিয়েছি, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে ভোটার করা যাবে না।”

রোহিঙ্গা অবস্থানের বিশেষ উপজেলাগুলো হল- কক্সবাজার সদর উপজেলা, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা।

বিশেষ এলাকায় বিশেষ কমিটির যাচাই

>> এসব বিশেষ এলাকায় ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহের সময় একটি বিশেষ তথ্য ফরম পূরণ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ ওই ফরমের তথ্যগুলো অলাইনে যাচাই করবে বিশেষ কমিটি।  

(ক) ভাই/বোনের ডেটাবেইজে পিতা/মাতার নামের সাথে আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে।

(খ) চাচা/ফুফুর ডেটাবেইজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে।

(গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়র মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।

>> উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবে।

>> রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার জন্য কেউ সহযোগিতা করলে, মিথ্যা তথ্য দিলে, জাল কাগজপত্র সরবরাহ করলে অথবা সংশ্লিষ্ট কারো গাফিলতি হলে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা করতে হবে।

ইসি সচিব জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের, মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে, নারী ভোটারদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আলাদা আলাদা প্রচার কার্যক্রম চালাতে বলা হচ্ছে।

তথ্য সংগ্রহকারীরা যাতে প্রতিটি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন, সে বিষয়েও তদারকি করা হবে বলে জানান সচিব।

তিনি বলেন, “শুধু একটি জায়গায় বসে যেন তথ্য সংগ্রহ করা না হয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য নিতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীদেরও নজরদারিতে রাখা হবে।”

হিজড়াদের পরিচয়

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, এবার হালনাগাদের সময় হিজড়া পরিচয়ে ভোটার হতে পারবেন তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা। ভোটার নিবন্ধন ফরমে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ ঘরে নারী, পুরুষের পাশাপাশি ‘হিজড়া’ রাখা হয়েছে। তাদের আলাদা ভোটার তালিকাও করা হবে।

স্মার্ট কার্ড

এবার হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা আগামী ৩১ জানুয়ারি তালিকাভুক্ত হবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের সময় তাদের হাতে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে বলে জানান ইসি সচিব।

বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকায় রয়েছেন। হালনাগাদে আরও প্রায় ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ হবে এবার। হালনাগাদের সময় ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিয়ে রাখা হবে।