বিজিএমইএ ভবন থেকে মালামাল সরাতে আরও সময়

ভেঙে ফেলার জন্য বিজিএমইএ ভবন বন্ধ করে দেওয়ার এক দিন পর আবারও মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেলেন ১৫ তলা ওই ভবনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2019, 07:14 AM
Updated : 18 April 2019, 07:23 AM

মালিকপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ওই ভবনের তালা খুলে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হলেও কিছু প্রতিষ্ঠানের মালপত্র থেকে গিয়েছিল। বিকাল ৫টার মধ্যে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।  

রাজউকের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “যারা মালামাল সরিয়ে নিতে আবারও আবেদন করেছেন তাদের জন্য আমরা আজকে তালা খুলে দিয়েছি৷ তারা আজ সারাদিন মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে আজকেও যদি মালামাল সরিয়ে নেওয়া শেষ না হয়, তারা আবেদন করলে আমরা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেব।”

ওই ভবনের দশম তলা থেকে ১৩তম তলা পর্যন্ত অংশের মালিকানা ছিল ডিবিএল গ্রুপের হতে। প্রতিষ্ঠানটির মালামাল সরানোর কাজ তদারকি করতে আসা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, “আজকের মধ্যে সব মালামাল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করছি৷ ৬০০ শ্রমিক কাজ করছে৷ আশা করছি আজকের মধ্যেই পারব।”

ভবনের ষষ্ঠ তলার ক্লিপটন গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, “অনেক আগে হাই কোর্ট নির্দেশ দিলেও বিজিএমইএ আমাদের কোনো নোটিস দেয়নি৷ উত্তরায় স্থায়ী ভবনে যেতে আরও এক মাস সময় লেগে যাবে। এ কয় দিনে আমাদের বেশ ক্ষতিই হল।” 

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয় ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন। ২০০৬ সালে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

জলাশয়ের উপর আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা এই ভবনকে হাতিরঝিলের প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।

সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সবশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময়সীমা গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়।

ওই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে ভাঙার যন্ত্রপাতি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিজিএমইএ ভবনের সামনে উপস্থিত হন রাজউকের কর্মকর্তারা।

ভবনটির বিভিন্ন তলায় থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নিতে সেদিন বিকাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পরে সময় বাড়িয়ে সুযোগ দেওয়া হয় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

এরপর বিভিন্ন ফ্লোরে তালা দিয়ে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজউক। মূল ফটকেও তালা দিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে আর ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বাছাই করা হবে ঠিকাদার।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত’ দেশীয় প্রতিষ্ঠান না পেলে বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হবে।

আদালতের রায়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকেই ওই অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। আর তারা তা না করলে রাজউককে ভবন ভেঙে খরচের টাকা বিজিএমইএর কাছ থেকে আদায় করতে বলা হয়েছিল।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ভবন ভাঙতে কী পরিমাণ টাকা লাগতে পারে, তার একটা মোটামুটি অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল আগেই। দুই কোটি টাকার মত লাগতে পারে। ভবনের মালামাল বিক্রি করে এই টাকাটা উঠে যাওয়ার কথা।”

দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য যে দরপত্র ডাকা হয়েছে, সেখানেই ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনায় আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।

দরপত্রের শর্তে বলা আছে, ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। যারা ভবন ভাঙবেন তারাই মালামাল কেনার দরপত্র দাখিল করতে পারবেন। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মূল্য উল্লেখ করবেন, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।

ভবন ভাঙার বিষয়ে বিজিএমইএ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে মন্তব্য করে পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের নির্দেশনায় রাজউক ভবন ভাঙার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই দিতে হবে।

“আমরা আপাতত উদ্যোগ নিয়ে দক্ষ লোক দিয়ে ভবনটি ভাঙব। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে ভাঙার খরচসহ নানা বিষয় আমাদের প্রসেসের ভেতর থেকে অ্যাসেস করব। যদি দেখা যায়, আমাদের কোনো ঘাটতি থাকল, সেটা নিয়ে আমরা তাদের (বিজিএমইএ) নোটিস দেব।”

হাতিরঝিলের ভবনটি হারিয়ে এখন ঢাকার উত্তরায় ১১০ কাঠা জমির উপর ১৩ তলা নতুন ভবন তৈরি করছে বিজিএমইএ; গত সপ্তাহে তা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভবন ভাঙার খরচের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিজিএমইএর বিদায়ী সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো কথা হয়নি। সেটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা বসব।”