কার দোষে জাহালমের দুর্ভোগ, দুদকের প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট

আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2019, 11:19 AM
Updated : 17 April 2019, 11:29 AM

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত ৩৩টি মামলার নথি হাই কোর্টে জমা দেওয়ার বিষয়ে এক শুনানিতে বুধবার এ প্রতিবেদন চায় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

এ বিষয়ে আগামী ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে আদালত। 

রাষ্ট্রপক্ষে এদিন আদালতে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

আর জাহালমের পক্ষে ছিলেন অমিত দাশ গুপ্ত। ভাইকে নিয়ে জাহালমও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

যে ৩৩ মামলায় জাহালমকে কারাগারে রাখা হয়েছিল, সেসব মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট ও ব্যাংকের নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে গত ৬ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

এসব নথি ১০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলেও ওইদিন দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সময়ের আবেদন করেন। হাই কোর্ট তখন বুধবার পর্যন্ত সময় দেয়।

তিন বছর জেল খাটা জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন, তা তার মুখ থেকে শুনতে তাকেও বুধবার আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

সে অনুযায়ী মামলাটি বুধবার শুনানির জন্য উঠলে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় নথি এখনও আদালতে আসেনি।

এক মাসেও ফাইল না আসায় বিষ্ময় প্রকাশ করে হাই কোর্ট বেঞ্চ তখন দুদকের আইনজীবীর কাছে এর কারণ জানতে চায়।

উত্তরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “ওই কোর্ট (নিম্ন আদালত) থেকে এখনও ফাইল আসেনি। আমি ওই কোর্টে মেনশন করেছি, আজকে আবার ম্যানশন করব।”

এরপর খুরশীদ আলম খান নথি দাখিলের জন্য দুই সপ্তাহ সময় চাইলে হাই কের্ট ২ মে পর্যন্ত সময় দেয়।

আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত  এ সময়বলেন, “আজকে তো জাহালমকে কোর্টে নিয়ে আসা হয়েছে। আপনারা বললে কথা শুনতে পারেন।”

বিচারক  তখন আদালত বলেন, “যেহেতু ফাইল আসেনি, আজ থাক। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আজ ফাইল আসবে।”

এরপর আদালত দুদকের আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, এ ঘটনায় দুদকের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে কি না। 

বিচারক বলেন, “প্রতিবেদন তৈরি হলে দাখিল করবেন। আমরা দেখব এটার জন্য হু ইজ রেসপনসিবল। আমরা দেখতে চাই। প্রতিবেদনটা অনেক জরুরি। ৩৩ মামলার নথিও সঙ্গে দাখিল করবেন।

“যাদের ভুলের কারণে জাহালমের তিনবছর কারাবাস হল এবং যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের আমরা দেখব।”

পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটার একটা ইন্টারনাল তদন্ত হচ্ছে। একজন তদন্ত করছেন। উনাকে ২০ দিনের সময় দিয়েছিল। আরও ৭ দিন সময় চেয়েছেন। কোর্ট প্রতিবেদন দেখতে চাইছেন। সমস্ত কিছু দেখতে চাচ্ছেন- দায়টা কার।”

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।  

পরে আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।