ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরো সিটিতে ইভিএম

আগামী বছরের অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2019, 07:32 PM
Updated : 17 April 2019, 02:51 PM

বুধবার নির্বাচন কমিশন সভার পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি আরও বলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনে সবখানে সম্ভব না হলেও অর্ধেক আসনে (১৫০ আসনে) ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।”

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে নতুন ইভিএমে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ভোট হয়।

৫ মে ময়মনসিংহ সিটিরও সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হচ্ছে।

এ ধারাবাহিকতায় আগামী বছর অনুষ্ঠেয় তিন সিটি ও পৌরসভার ভোটে ইভিএমের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

হেলালুদ্দীন বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। সব পৌরসভায়ও ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০২৩ সালে। তবে বর্তমান ইসি সেই নির্বাচনে ইভিএমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

আর সেই লক্ষ্যে ইসি সচিবালয় কাজ করে যাচ্ছে বলে সচিব জানান।

ইসির নতুন ইভিএম

২০১৭ সালে বর্তমান ইসির নিজেদের তৈরি নতুন ইভিএমের যাত্রা শুরু করে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে সংসদে ইভিএম চালুও করা হয়। সিটি ভোটে কিছু কেন্দ্রে চালুর পর সংসদে ছয়টি আসনে ব্যবহার করে সমালোচনার মুখেও পড়ে সংস্থাটি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, “বিষয়টি তো আরও পাঁচ বছর পরের। অবশ্যই এজন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার দরকার আছে।”

ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএমের জন্য একটি প্রকল্পও (বাস্তবায়নকাল- শুরু জুলাই ২০১৮ থেকে সমাপ্তি জুন ২০২৩) রয়েছে।

ইউপিতে বাছাই করে ইভিএম

ইউনিয়ন পরিষদে বাছাই করে কিছু এলাকায় ইভিএম ব্যবহারের কথা জানান ইসি সচিব।

তিনি বলেন, “উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদে কিছু এলাকার ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা রয়েছে; কম্প্যাক্ট এরিয়া নয়। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ আছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেসব উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ বেছে বেছে ইভিএমে ভোট করা হবে।”

জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে ভোট, ভোটকক্ষে ও সম্ভাব্য ইভিএম ব্যবহার চিত্র

নির্বাচন

নির্বাচনী আসন/সংস্থা

সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র

সম্ভাব্য ভোটকক্ষ

ইভিএম (প্রতিকেন্দ্রে ১টি অতিরিক্ত ধরে)

ইউপি নির্বাচন

৪৫৫৫

৪৫,৫০০

২,৭৩,০০০

৩,১৮,৫০০

প্রথম ধাপে নির্বাচন

৭৫০

৭,৫০০

৪৫,০০০

৫২,০০০

পৌরসভা নির্বাচন

৩২৩

৫,০০০

৩০,০০০

৩৫,০০০

সিটি করপোরেশন নির্বাচন

১১

৫,০০০

৩০,০০০

৩৫,০০০

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি

৩৩০০

২০,০০০

২৩,০০০

সংসদ নির্বাচন

৩০০ আসন

৪৪,০০০

২,২০,০০০

২,৬৪,০০০

অর্ধেক নির্বাচনী এলাকা

১৫০ আসন

২২,০০০

১,১০,০০০

১,৩২,০০০

সূত্র: ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা

ইভিএমের ৯ বছর

২০১০ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ইভিএম ব্যবহার করে তৎকালীন এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন।

ওই ইভিএম দিয়ে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী পৌরসভায় ভোট হয়।

স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে (সিটি, পৌর, উপজেলা, ইউপি) ইভিএম ব্যবহারে আইন সংশোধনের পর বিধিমালাও করা হয়।

সর্বশেষ ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রংপুরে ছোট পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

নির্বাচন ভবন

নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম আরও উন্নত করে নতুনভাবে ব্যবহার করছে।

সর্বশেষ বুধবার কমিশন সভায় বিদ্যমান বিধিমালা (পৌর ইভিএম বিধি ২০১২, ইউপি ইভিএম বিধি ২০১৫) পর‌্যালোচনা করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ণের সিদ্ধান্ত হয়।

বর্তমান ইসির অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে নতুন ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এর আগে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, গাজীপুর ও সিলেট সিটিতে কিছু কেন্দ্রে এ ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

সদ্য শেষ হওয়ায় উপজেলা নির্বাচনে সাড়ের চারশ’ উপজেলার মধ্যে মাত্র ১০টি এলাকার সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

৫ মে ময়মনসিংহ সিটিতে ভোট হবে। আগামী বছর ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল এ তিন সিটিতে ভোট হয়। সেক্ষেত্রে আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভোট হবে তিন সিটিতে।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একদিনেই আড়াইশ পৌরসভায় ভোট হয়েছিল। আর ২০১৬ সালে ছয় ধাপে চার হাজারেরও বেশি ইউপির ভোট হয়। 

দলীয় প্রতীকে ২০২০ সালের পৌরসভা ও ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট হবে।