গ্রিন লাইনের মামলায় লড়তে চায় বাস মালিক সমিতি

পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ গ্রিন লাইন পরিবহন পাঁচ দিনেও না নেওয়ার মধ্যে তাদের পক্ষে মামলায় যুক্ত হতে আদালতে আবেদন করেছে বাস মালিকদের সংগঠন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2019, 02:29 PM
Updated : 9 April 2019, 02:36 PM

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে।

তার আগে গত ৪ এপ্রিল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ ১০ এপ্রিলের মধ্যে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে সময় বেঁধে দিয়েছিল।

কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার একদিন আগেও গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারান প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার।

পরে গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক সাংসদ আইনজীবী উম্মে কুলসুম হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। রাসেলের বক্তব্য শোনার পর গত ১২ মার্চ গ্রিন লাইন পরিবহনের ব্যাখ্যা শুনে হাই কোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।

গ্রিন লাইন পরিবহন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েও বিফল হওয়ার পর হাই কোর্ট ১০ এপ্রিলের মধ্যে অর্থ পরিশোধের সময় বেঁধে দিয়ে বলে, এই সময়ের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে গ্রিনলাইনের সব বাস জব্দ করা হবে।

শুনানিতে রাজি হননি মতিন খসরু

পরিবহন মালিকদের সংগঠন আদালতে আবেদন করার পর মঙ্গলবার দুপুরে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুকে প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই সংসদ সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি মানসিকভাবে ভিকটিমের পক্ষে। টাকার জন্য তো বিবেক বিক্রি করে ওই পক্ষে যেতে পারি না।

আব্দুল মতিন খসরু (ফাইল ছবি)

“এ জন্য আমাকে টাকা অফার করেছিল কিন্তু আমি বললাম যে না, আমি মানসিকভাবে বিবেকের তাড়নায় একটা পক্ষে। আমি যে কোনো মামলায় যে কোনো পক্ষে যেতে পারি না। বিবেক বলতে একটা কথা আছে। আমি বিবেক বন্ধক রেখে ওকালতি করতে পারি না।”

গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী অজিউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটাতে আমি ছিলাম না। এটা আমি জানিও না। এটা মনে হয় অন্য উকিলরা করতেছে।”

রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা (বাস মালিক সমিতি) নাকি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১২ মার্চের (হাই কোর্টের) আদেশটা স্থগিত চেয়ে প্রেয়ার দিছিল। সেটা নট টুডে করে আগামীকাল ২টায় শুনানির জন্য রেখেছে।”

ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেই

রাসেল সরকারের পা হারানোর ঘটনায় রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা মঙ্গলবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “আজ পর্যন্ত ওরা কোনো যোগাযোগ করে নাই।”

এরপর সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী অজিউল্লাহ বলেন, রাসেল সরকারকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে এখনও তিনি তার মক্কেলের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি।

রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীরা জানান, তারা অজিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাননি।

অজিউল্লাহ বলেন, “ওদের লইয়ার আমাকে ৫টা ৩৩ মিনিটে মিসকল দিল দেখতেছি, অ্যাডভোকেট খালেদ, অবশ্য নিম্ন আদালতের লইয়ার।”

পা হারানো রাসেল সরকার (ফাইল ছবি)

গ্রিন লাইনের মালিক কর্তৃপক্ষের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, “টাকা দেওয়ার বিষয়ে উকিল হিসেবে এখনও আমি কোনো নির্দেশনা পাই নাই।

“হয়ত কালকে ওরা হাজির হবে। জেনারেল ম্যানেজার এসে গেছে, মালিক ছিল না। মালিক দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গেছিল। সে তো চিকিৎসা করে বিদেশ থেকে এসেছে। কালকে হয়ত আদালতে হাজির হবে। কী করেন, কী পদক্ষেপ নেবেন, জানা যাবে।”

গ্রিন লাইন পরিবহনের প্রোপাইটার হাজী মো. আলাউদ্দিন ভারত থেকে ৯ এপ্রিল ফিরবেন বলে হাই কোর্টে এসে জানিয়ে ছিলেন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার।

আদালত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর ১০ এপ্রিল হলফনামা আকারে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিককে।

এরপর আদালত লিখিত আদেশ দিয়ে ১০ এপ্রিল বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য রাখে।

সেদিন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, “১০ তারিখের মধ্যে আমাদের আদেশের বাস্তবায়ন না হলে আইন অনুযায়ী যে ধরনের আদেশ দেওয়া দরকার, তাই দেব।”