জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ১৯ মিলিয়ন শিশু: ইউনিসেফ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একজনের জীবন ও ভবিষ্যৎ ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে বিশ্বকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2019, 06:05 PM
Updated : 5 April 2019, 06:05 PM

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন আগামী প্রজন্মের জন্য যে বিপদ বয়ে আনছে, তা এড়াতে আরও সম্পদ, আরও নতুন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

‘এ গ্যাদারিং স্টর্ম: ক্লাইমেট চেইঞ্জ ক্লাউডস দ্য ফিউচার অব চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো, যেখানে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি শিশুর বসবাস।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী যেসব পরিবর্তন তৈরি হচ্ছে, তা উপকলীয় এলাকার পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে শিশুদের শিক্ষা আর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। 

ইউনিসেফের গবেষক সায়মন ইংগ্রাম রয়টার্সকে বলেন, যে শিশুরা আজ অপুষ্টির শিকার হচ্ছে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, ভিটামাটি হারিয়ে শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে, তারা ভবিষ্যতে নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তৈরি হতে পারছে না।  

বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে ২০১৫ সালে প্যারিসে যে জলবায়ু চুক্তি হয়, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে বেঁধে রাখার উদ্যোগে নেওয়া হবে, যাতে তা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়।

কিন্তু জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থার হিসেবে, বর্তমানে উষ্ণতা যে হারে বাড়তে তাতে তা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

আর এর প্রভাবে বন্যা, খরা, ঝড়, দাবানলের মত দুর্যোগের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে নিরাপদ পানির সঙ্কট, ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের ঝুঁকি।

২০১৯ সালের বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকার নয় নম্বরে। আর ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৭ নম্বরে।  

গত মার্চে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে থাকা উপকূলীয় এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য যথাযথভাবে আশ্রয়, খাবার, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছে না।

শিশুর সুরক্ষা ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সব অর্জন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে হুঁশিয়ার করেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে নদী ভাঙনের কারণে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৪৫ লাখ শিশু ঘূর্ণিঝড় এবং অন্য এলাকার ৩০ লাখ শিশু রয়েছে খরার ঝুঁকিতে। 

এই পরিস্থিতিতে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হচ্ছে, সেখানে এসে শিশুরা শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে, আর মেয়েরা হচ্ছে বাল্য বিয়ের শিকার।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্সমকর্তা নুরুল কাদির টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেছেন, ইউনিসেফ যে বিষয়গুলো সামনে এনেছে, সেসব বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার কাজ শুরু করেছে। 

সারা দেশে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং এ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পরেক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।