অটিস্টিকদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান

প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে অটিস্টিকদের দক্ষ করে তাদের সমাজের মূলধারায় যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন একটি আলোচনা সভার বক্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2019, 04:09 PM
Updated : 4 April 2019, 04:09 PM

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘মেইনস্ট্রিমিং অব পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ফোকাসিং অটিজম: রোল অব স্টেট অ্যান্ড নন-স্টেট অ্যাক্টরস’ শীর্ষক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, সমাজে সবার মতো অটিস্টিক ব্যক্তিদেরও অধিকার রয়েছে।

“তাদের যদি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি তাহলে তারা যথাযথ কাজে লাগবে। তখন তারা আমাদের সমাজের মূল ধারার অংশীজন হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম নিয়ে কাজ করে একটা জায়গায় পৌঁছেছেন। তবুও এসব মানুষদের নিয়ে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।

“আমরা এখন প্রতিবন্ধীদের সবাই পেট্রোনাইজ করি, যখন তাদের পেট্রোনাইজ করি তখন তারা মনে করতে থাকে তাদের কিছু ঘাটতি ও অভাব আছে, এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”

পরিবারই অটিস্টিক শিশুদের সমাজ থেকে লুকাতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, “পরিবার তাদের এই শিশুটিকে লুকানোর কারণ হিসেবে মনে করে তাদের শিশুটি অসুস্থ, কিন্তু অটিজম কোনো রোগ নয়, যে কোনো শিশু বা ব্যক্তি কোনো অবস্থায় এমন হতে পারে।”

এমন বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্নদের মূলধারায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, এনজিওসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। 

অটিস্টিক শিশুদের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, “আমরা তাদের কোনো দয়া-দক্ষিণা করছি না। আমরা কেবল আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সমাজে বহু অটিস্টিক লোক আছে, তাদের প্রতিবন্ধী বলে বলে খাঁচায় বন্দি করে ফেলেছি।

“তাদেরকে মূল স্রোতধারায় আনতে হবে, কারণ তারা সমাজে কট্রিবিউট করতে পারে। তাদের প্রতিভা আছে, কিন্তু আমরা তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারছি না।”

অটিস্টিক শিশুদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকার দক্ষ করছে জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “এখন তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা প্রতিভাবান, আপনারা দেখেন এসব ছেলে-মেয়েরা আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারে কি না।”

কী কারণে অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটা শিশু জন্ম নেয় তা কোনো গবেষণার মাধ্যমে এখনও নির্ণয় করা যায়নি বলে মন্তব্য করেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিম।

“কোনো পরিবারে একটি শিশু অটিস্টিক হলে পুরো পরিবার অসহায় বোধ করে। কিন্তু তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা চিহ্নিত করতে পারলে আমরা তাদের দ্বারা কোনো অসাধ্যকে সাধন করতে পারব।”

তিনি বলেন, পিকেএসএফ সমাজের ১২টি ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে; তাদের মধ্যে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীরা রয়েছেন।

বাংলাদেশ নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবলিটি প্রোটেশন ট্রাস্টের চেয়ারপারসন গোলাম রাব্বানী বলেন, “অটিস্টিকদের বিষয়ে আমরা আইন, প্রচার-প্রচারণা ও সাংগঠনিক দিক থেকে এগিয়ে আছি, তবুও অটিজম বৈশিষ্ট্যের শিশুদের এখনও স্কুলে ভর্তি করাতে চায় না।

“এক্ষেত্রে প্রথমে বাধা আসে হেড মাস্টারের কাছ থেকে। কোনো কোনো অভিভাবকও মনে করে, তার বাচ্চার পাশে কোনো পাগল শিশু বসতে পারে না।”

এ বিষয়ে জনসাধারণের সচেতনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “অটিস্টিক শিশুরা কোনো রোগী না। তারা সমাজেরই অংশ। তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে তারা সমাজে অবদান রাখবে।”

দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা নাছরিন আহমেদ। তার দুই মেয়েই অটিস্টিক।

অটিস্টিক দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমার বাচ্চাদের নিয়ে যেখানে যে অনুষ্ঠানে যাই সেখানেই মানুষ নানাভাবে সমালোচনা করে, তাদেরকে পাগল বলে।

“এমনকি আমি আমার বাসায় থাকলেও প্রতিবেশীরা যন্ত্রণা ভোগ করে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে, মানুষ বিরক্ত বোধ করে। তাদের কারণে আমিও মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি।”

চার বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার কথা জানিয়ে দুই অটিস্টিক মেয়ের ভবিষৎ নিয়ে নিজের দুঃশ্চিন্তা তুলে ধরে নাছরিন বলেন, “আমি যেদিন পৃথিবীতে থাকব না তখন আমার এই দুই মেয়ের দেখভাল কে করবে? সেই বিষয়ে সরকার একটা ব্যবস্থা করুক। আমি যেন তাদরকে একটা সেইফ অবস্থায় রেখে যেতে পারি।”

‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ২ এপ্রিল বাংলাদেশেও দ্বাদশ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়।  

এই দিবস উপলক্ষে নীল বাতি প্রজ্জ্বলনসহ তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি নেয় সরকার। 

আরো খবর