প্রয়োজনে গ্রিন লাইনের বাস জব্দ করে টাকা আদায় হবে: হাই কোর্ট

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাদের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা না দেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2019, 06:23 AM
Updated : 4 April 2019, 09:46 AM

বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্ট বলেছে, আদেশ মানতে না চাইলে ওই পরিবহন কোম্পানির ম্যানেজারকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে গ্রিন লাইনের সব গাড়ি জব্দ করে নিলামে তুলে টাকা আদায় করা হবে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে এই হুঁশিয়ারি আসে।

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইনের একটি বাসের চাপায় পা হারানো রাসেলকে বুধবারের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। টাকা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু রিটকারী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বৃহস্পতিবার সকালে আদালতকে বলেন, “গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি। আমার মনে হয় তাদের ফিজিক্যাল অ্যাপিয়ারেন্স দরকার।”

গ্রিনলাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ তখন আদালতকে বলেন, আদেশের বিষয়টি তিনি পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জনিয়েছেন। কিন্তু গ্রিনলাইনের প্রোপাইটার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন।

আদালত গ্রিনলাইন পরিবহনের প্রোপাইটারের নাম জানতে চাইলে ওজিউল্লাহ বলেন মালিকের নাম আলাউদ্দিন।

তখন আদালত জানতে চায়, আলাউদ্দিন কবে কোন দেশে গেছেন, কবে ফিরবেন?

 সেসব তথ্য দিতে না পেরে গ্রিনলাইনের আইনজীবী তখন বলেন, “আমার কথা হয়েছে ম্যানেজারের সঙ্গে।”

ফাইল ছবি

বিচারক তখন বলেন, “ম্যানেজার কোথায়, ম্যানেজারকে ডাকেন। না আমরা তাকে অ্যারেস্ট করার ব্যবস্থা করব? নাকি তার সমস্ত গাড়ি সিজ করার ব্যবস্থা করব, কোনটা চান?”

এ সময় গ্রিনলাইনের আইনজীবী বলেন, “আমি ম্যানেজারকে এখনি জানাব।”

বিচারক পরে বলেন, “একটা সীমা থাকা উচিৎ। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ম্যানেজারকে ২টায় আসতে বলেন। সমস্ত গাড়ি সিজ করতে বলব যদি পজেটিভ স্টেটম্যান্ট না পাই।” 

এই শুনানিতে উপস্থিত থাকতে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে আদালতে আসেন রাসেল সরকার। গত বছর ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়।

পরে গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সাবেক সাংসদ আইনজীবী উম্মে কুলসুম।

রিটের প্রাথমিক শুনানিতে গত ৬ মার্চ রাসেল আদালতকে বলেছিলেন, পা হারানোর পর গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা করেনি। এমনকি কোনো খোঁজখবর বা চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি।

এরপর গত ১২ মার্চ গ্রিন লাইন পরিবহনের ব্যাখ্যা শুনে হাই কোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেয়।

সঙ্গে ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে রুলও জারি করে আদালত। রাসেল সরকারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

সে আদেশ স্থগিত চেয়ে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে চেম্বার আদালত গত ১৪ মার্চ হাই কোর্টের আদেশটি স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠায়।

গত রোববার সেই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ। ফলে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশই বহাল থাকে।

হাই কোর্ট গত ১২ মার্চের আদেশে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের খরচে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাসেলের কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলে।

এছাড়া রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে, সে খরচও গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়।

আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ৩১ মার্চ আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে গ্রিন লাইন পরিবহনকে সেদিন নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সে অনুযায়ী বিষয়টি গত রোববার হাই কোর্টে ওঠে।

গ্রিন লাইনের আইনজীবী আপিল বিভাগে তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানালে হাই কোর্ট বুধবারের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা রাসেলকে পরিশোধের নির্দেশ দেয়।