ওসিরা এত সাহস কোথায় পায়: হাই কোর্ট

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসির কর্মকাণ্ডে থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ ঝেড়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2019, 12:33 PM
Updated : 2 April 2019, 01:05 PM

এক বিচারক বলেছেন, ওসিরা এত সাহস কোথায় পায়?

মামলা না নেওয়ায় শ্যামনগরের ওসি হাবিল হোসেনের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির রিট আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।

শুনানিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসির বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারীর মামলা না নেওয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানালে আদালত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

বিচারক বলেন, “ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি, কেন তিনি মামলা নিলেন না। ওসি সাহেবরা সব জায়গায় কোর্ট বসিয়ে দেন। তারা কি সালিশ করতে বসেছেন যে সুবিধামতো হলে মামলা নেবেন। অথচ টাকা ছাড়া থানায় একটা জিডিও হয় না।

“ওসিরা যেখানে সেখানে কোর্ট বসায়, রাতে কোর্ট বসায়। এত সাহস তারা কোথায় পায়? তারা নিজেরা বিচার বসায় কেমনে?”

বিচারক আরও বলেন, “১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হতে পারে না। অনেক পুলিশ খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করেন। অথচ অনেকের দেখি ৪-৫টা করে বাড়ি। দেশটা কি চোরের দেশ হয়ে গেছে?”

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের মো. ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা হয়। এজন্য ওই গ্রামেরই ইউসুফ আলীসহ তার সঙ্গীদের দায়ী করছেন ফজলুর।

তার অভিযোগ, তাকে মারধর করে নগদ দুই লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি সোনার চেইন ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে এবং যাওয়ার সময় তারা বাড়ির সীমানা প্রাচীরও ভেঙে দেয়।

ফজলুরের অভিযোগ, হামলার সময় শ্যামনগর থানার ওসি হাবিল হোসেনকে ফোন দিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওসি ‘অন্য কাজে ব্যস্ত’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এরপর ফজলুর কালিগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার এক এএসআই ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

ফজলুরের বাড়িতে গিয়ে ওই এএসআই থানার ওসিকে ফোন করেন। এক পর্যায়ে এএসআইর ফোনে ওসির সঙ্গে কথা হয় ফজলুরের।

তিনি বলেন, ওসি তখন তকে শাসিয়ে বলেছিলেন, ‘উপর মহলে নালিশ করিস, তোর মামলা হবে না, কোর্টে মামলা কর’।

ফজলুরের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি অনুনয়-বিনয় করলে ওসি সকালে ‘আবার তদন্ত হবে’ বলে জানান।

তিনি বলেন, পরদিন শ্যামনগর থানার এসআই মনিরুজ্জামান তদন্ত করে বলেন, ‘মামলা হবে না’। তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে নিয়ে বসে এর মীমাংসা করার পরামর্শ দেন।

ফজলুর সালিশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কাছে পুরো ঘটনা তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেন।  

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এসপি শ্যামনগর থানার ওসিকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। তারপরও ওসি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ৩ মার্চ হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ফজলুর।

গত ১০ মার্চ প্রাথমিক শুনানিতে আদালত সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিতে বলেছিলেন।

মঙ্গলবার শুনানিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম ঘটনার আংশিক সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।

তখন আদালত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে তদন্ত প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়ে আগামী রোববার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে দেন।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ স্বর্ণালঙ্কার লুট, হামলা, দরজা ভাঙার কোনো প্রমাণ পায়নি। কিন্তু পাঁচিল ভাঙার প্রমাণ পেয়েছেন। কোর্টকে এটা জানানোর পর কোর্ট বললো, যেহেতু পাঁচিল ভাঙা পেয়েছে আংশিক সত্যতা তো পাওয়া গেছে। তাহলে পুলিশ কেন মামলা নেবে না?”

পারিবারিক বিরোধ হওয়ায় ওসি সালিশের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তির কথা বলেছিলেন বলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জানালে বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “পুলিশের কাজ তো এটা না। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে মামলা নেওয়া। পরবর্তী তদন্তে যদি ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ হয় তাহলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেবে বা আসামিদের খালাস দেবে।”

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আদালত একটি সমীক্ষা তুলে ধরে বলেছে যে, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার দুর্নীতিগ্রস্ত। ২ লাখ সদস্য সৎ এবং ভালো। সুতরাং এই ১৩ হাজারের কারণে দুই লাখ পুলিশ সদস্যের সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে না।”

মামলাটি এক সপ্তাহের জন্য ‘স্ট্যান্ডওভার’ রেখে আদালত শ্যামনগর পুলিশকে এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে বলে জানান তিনি।