হল সংসদের প্রার্থী হয়েছিলেন, এখন মাথা ফাটাল ‘ছাত্রলীগ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে গভীর রাতে এক ছাত্রকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে, যিনি গেল মাসে ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2019, 10:35 AM
Updated : 2 April 2019, 10:37 AM

ফরিদ হাসান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের স্নাতকোত্তরের ওই শিক্ষার্থীর কানের পাশে ও চোখের উপরে জখম হয়েছে, ৩২টি সেলাই লেগেছে সেখানে।

সোমবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন ফরিদ। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি আছেন তিনি।

মারধরের বিষয়ে ফরিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি রাত ১১টার দিকে রুমে (১৫৯ নম্বর) ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের ৪-৫ জন লাঠিসোঁটাসহ গিয়ে আমাকে ডেকে মেসের ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়। সেখানে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, হল সংসদের বর্তমান জিএস জুলিয়াস সিজারসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

“এরপর তারা আমি হলে থাকি কেন এই বলে মারতে মারতে হল গেটে নিয়ে যায়। এ সময় প্রায় ২৫-৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে ডান কানের পেছনে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে যাই। পরে এই অবস্থায় একাই হাসপাতালে যাই।”

গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এসএম হল সংসদে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ফরিদ। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা তাকে শাসিয়ে ও হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ দিলে এক পর্যায়ে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তাকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাদক সেবনের অভিযোগে ফরিদের রুম আগে থেকেই সিলগালা ছিল। হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। আর সে আগে থেকে হলে ছিল না। রাতে হলে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেন।”

সকালে মেডিকেল সেন্টারে ফরিদকে দেখতে আসেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

সেখানে নুরুল হক নূর বলেন, “তাকে অমানবিকভাবে মারা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য আমাদের যা করা লাগে তাই করব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ অফিসিয়ালি বিষয়টি অবহিত করেননি। তবে আমি শুনেছি। আর যেহেতু বিষয়টি হলের তাই হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে।”

এ বিষয়ে জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

হামলাকারীদের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ডাকসুর ভিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে ফরিদ জানিয়েছেন।