ঋণের সুদের হার এখনও কেন কমছে না, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের পরও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কেন কমছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য কিছু কিছু ব্যাংক মালিকের সমালোচনা করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2019, 09:29 AM
Updated : 31 March 2019, 09:29 AM

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার জাতীয় শিল্প মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংকের ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েকদিন আগে আমরা বসেছিলাম, কিভাবে ব্যাংকের সুদের হারা কমানো যায়। 

“সাথে সাথে আমার এটাও আমার অনুরোধ থাকবে যারাই এই ঋণটা নেবেন আপনারাও যদি টাকাটা সাথে সাথে দিয়ে দেন বা সুদটা পরিশোধ করেন তাহলে ব্যাংকগুলো সচল থাকে। তখন কিন্তু সুদের হার কমানোটা খুব একটা কঠিন হবে না।”

ঋণের উচ্চ সুদের হার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশকিছু সুযোগ সুবিধাও করে দিলাম। যেমন আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে আর ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হত। ব্যাংকের মালিকরা বললেন ‘এটা যদি ফিফটি ফিফটি করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা (সুদের হার) সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। 

“সেটাও কিন্তু করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং দিলাম। কিছু ব্যাংকে ঠিকই সুদের হার ৯ পারসেন্টে নামানো হল। কিন্তু সকলে তা করল না। বাড়াতে বাড়াতে ১৪, ১৫, ১৬ তে নিয়ে গেল। কেন করল না তাদের এই সুযোগটা দেওয়া সত্ত্বেও?”

শেখ হাসিনা বলেন, “এখন আমার এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, এই ব্যাংকের মালিক যারা তাদেরও তো শিল্প কলকারখানা আছে। তারাও তো ব্যবসা-বাণিজ্য করে। এখন আমাকে তো সেই জায়গাটা আগে হাত দিতে হবে। তারা ব্যাংকও চালাচ্ছে, শিল্পও চালাচ্ছে আবার তারা সুদের হার কমাবে না। তাহলে তাদের ব্যবসা কি কি আছে, না আছে, ট্যাক্সটা ঠিক মতো দিচ্ছে কিনা, ভ্যাট ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা, কাঁচামাল ঠিক মত আছে কিনা।

“শুধু সরকারই সব করে দেবে তা তো না। আমরা তো বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বেসরকারি খাতকে কিন্তু আমাদের সংবিধানেই স্বীকৃতি দেওয়া আছে। আমি সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতটা সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত করে দিয়েছি।”

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের একটা সার্বিক হিসাবে আছে দেশে ৭৮ লাখের মতো শিল্প কারখানা বেসরকারি খাতে আছে। প্রতি বছর সেখানে যদি একটা মানুষ কাজের সুযোগ পায় তাহলে ৭৮ লক্ষ লোক তো কাজ পেল। তারপরও কেন আমাদের হচ্ছে না সেটা হল কথা।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না দেওয়া আরেকটা প্রবণতা। এই প্রবণতাটাও দূর করতে হবে। ব্যাংকের যে টাকা, এ টাকার মালিক তো জনগণ।

“বেসরকারি খাতে আমরা ব্যাপকভাবে ব্যাংক করার সুযোগ করে দিয়েছি। আমার সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক-বীমা করার সুযোগ সুবিধা আমরা দিয়েছি। ব্যাংক শুধু দিলেই হবে না। মানুষের মধ্যে ব্যাংক ব্যবহারের একটা প্রবণতাও তৈরি করতে হবে। সেটাও আমরা করে দিয়েছি।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইমার্জেন্সি টাইমেও অনেকেই ভুক্তভোগী। অনেক ব্যবসায়ীকে কষ্ট পেতে হয়েছে আমি জানি। কেউ জেলে গেছেন, কেউ দেশছাড়া। কারও ব্যবসা-বাণিজ্য, কারও শিল্প বন্ধ প্রায় দুই বছর পর্যন্ত। তাদের জন্য আমরা এরই মধ্যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। তাদের জন্য আমরা ইতিমধ্যে বিশেষভাবে প্রণোদনা দিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও দিয়ে.. আমরা চাই ব্যবসায়ীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করতে পারে শিল্পায়নটা আরও দ্রুত যেন হয়।”

শিল্পকারখানার মালিকদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে শিল্পায়ন ছাড়া কর্মসংস্থান সম্ভব না। আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। কিন্তু এ কৃষিভিত্তিক শিল্প আমাদের দরকার। সে ক্ষেত্রে একদিকে আমাদের যেমন শিল্পায়ন প্রয়োজন অপরদিকে আমাদের কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার শিল্পের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।”

কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বিদেশে রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তবে শিল্পায়ন করতে গিয়ে কৃষি জমি যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও নজরও দিতে বলেন।

পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন সুযোগ সবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যদি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতে চাই তাহলে কার্গো আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন কার্গো ভাড়া করে চালানো হচ্ছে। বিমানকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, বিমানকে শুধু প্যাসেঞ্জার টেনে লাভজনক করা যাবে না। কার্গো আমাদের দরকার। কার্গো ভিলেজ আমাদের তৈরি করা দরকার।

“পণ্যগুলো যেন যথাযথভাবে, মানসম্মতভাবে সেখান থাকে এবং ২৪ ঘণ্টার ভেতর পাঠিয়ে দিতে পারি বিদেশে, সে ধরনের ব্যবস্থাপনায় আমাদের যেতে হবে। সেটায় যেতে গেলে বিদেশ থেকে কটা কার্গো ভাড়া করে নিয়ে আসব সেটা হবে না। আমাদের নিজস্ব কিছু থাকা দরকার,  যাতে দেশের জন্য লাভজনক হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।